সরানো হচ্ছে মৃতদেহ। ছবি: এএফপি।
বিধ্বংসী আগুনে পুড়ছে কোভিড হাসপাতালের একাংশ। ধোঁয়ায় ঢেকেছে গোটা ঘর। শিয়রে বিপদ। এই সময়েই ত্রাতা হয়ে উঠলেন এক সেবক। তাঁর তৎপরতায় প্রাণে বাঁচলেন তিন জন বয়স্ক রোগী। বৃহস্পতিবার ভোরে আমদাবাদের নবরঙ্গপুরা অঞ্চলের শ্রেয় হাসপাতালের ঘটনা। তত ক্ষণে ভয়াবহ আগুনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তিন মহিলা-সহ আট জন।
করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমদাবাদ পুরসভা কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করেছিল নবরঙ্গপুরার এই হাসপাতালটিকে। সঙ্কটজনক রোগীদের জন্য পাঁচতলায় একটি বিশেষ আইসিইউ ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছিল। হাসপাতালের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ ওই ওয়ার্ডে আগুন লাগে। সেই সময় মোট ১১জন রোগী ছিলেন সেখানে। এক সহকর্মীর কাছ থেকে আগুন লাগার খবর পেয়েই চিরাগ পটেল নামে ২৫ বছর বয়সি এক সেবক প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিন জনকে বাঁচান।
চিরাগ জানিয়েছেন, পাঁচতলায় পৌঁছে তিনি দেখেন, এক রোগীর শয্যার পাশেই রাখা মনিটরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুন ধরে যায় ওই রোগীর চুলেও। দ্রুত সেই আগুন নেভান তিনি। সরানো হয় শয্যাও। তত ক্ষণে অবশ্য অন্য এক সেবকের পিপিই-তেও আগুন ধরেছে। এক চিকিৎসক সেই আগুন নেভান। এর পরেই আইসিইউ ওয়ার্ডে বিস্ফোরণ হয়। ফের আটকে থাকা রোগীদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও তত ক্ষণে ঘন ধোঁয়ায় ঢেকেছে ওই ওয়ার্ড। সকলকে নেমে যেতে বলা হলেও হাল ছাড়েননি চিরাগ। তাঁর কথায়, ‘‘ওই পরিস্থিতিতে ঠিক করেছিলাম, যে ক’জন রোগীকে সম্ভব বাঁচাতেই হবে।’’ প্রথমেই এক অশক্ত রোগীকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে নীচে নেমে আসেন চিরাগ। ফের উপরে গিয়ে আরও দু’জনকে বাঁচাতে সমর্থ হন তিনি। এর পরে বহুতলের পাইপ বেয়ে উঠে জানালা থেকে বাকিদের বার করে আনার চেষ্টা করলেও আর পেরে ওঠেননি। চিরাগ বলেছেন, ‘‘আমার চেয়েও এক জন রোগীর জীবন মূল্যবান। আমি খুশি অন্তত তিন জনকে তো বাঁচাতে পেরেছি।’’
কী ভাবে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখতে প্রবীণ আইএএস অফিসার সঙ্গীতা সিংহ এবং মুকেশ পুরীর নেতৃত্বে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। মৃতের পরিজনের জন্য চার লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন তিনি। হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।