ফাইল চিত্র।
আশির দশকের দূরদর্শনে অন্যতম জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন ছিল ‘রোজ খাও আন্ডে’। উদ্যোক্তা ন্যাশনাল এগ কোঅর্ডিনেশন কমিটি। সহস্রাব্দের দু’দশক পার করে এখন সেই ডিমের মধ্যেই সামাজিক বৈষম্যের উৎস খুঁজে পাচ্ছেন জাতীয় শিক্ষানীতির কর্তাব্যক্তিরা। কর্নাটকের স্কুলপড়ুয়াদের জন্য নীতি-নির্দেশিকা তৈরি করতে যে কমিটি গড়া হয়েছে, তার রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিড ডে মিলে ডিম দেওয়া হলে তা সামাজিক বৈষম্যের কারণ হবে। শুধু তাই নয়, ভারতীয়দের শারীরিক কাঠামোয় নিয়মিত ডিম বা মাংস খেলে সেটা নাকি জীবনযাত্রায় প্রভূত সমস্যার সৃষ্টি করবে।
কমিটির মাথায় রয়েছেন নিমহানস-এর শিশু ও কিশোর মনস্তত্ত্ব বিভাগের প্রধান জন বিজয়সাগর। তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটিই বলেছে, শিশুদের মধ্যে খাবার নিয়ে বৈষম্য ঠিক নয়। ভারতীয় ধর্মও তা বলে না। ফলে কেউ ডিম খাবে, কেউ কলা খাবে (নিরামিষাশীদের ক্ষেত্রে), এমন ব্যবস্থা ঠিক নয়। বর্তমানে কর্নাটক সরকার মিড ডে মিলে ডিম এবং কলা দিয়ে থাকে। বৈষম্য দূর করার জন্য কমিটির প্রস্তাব, সকলকে তিলের নাড়ু, গুড় ইত্যাদি ‘সাত্ত্বিক খাবার’ দেওয়া হোক। তার সঙ্গে ভীম, হনুমানের খাদ্যাভ্যাসের কাহিনি পড়ানো হোক।
জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণের শর্ত হল, এনসিইআরটির ওয়েবসাইটে প্রতিটি রাজ্যকে তার অবস্থান-নামা (পজিশন পেপার) পেশ করতে হয়। সেই লক্ষ্যে কর্নাটক সরকার বিভিন্ন বিষয়ে ২৬টি কমিটি গড়েছে। সেখানে পুষ্টি বিষয়ক কমিটির নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক বিজয়সাগর। সেই কমিটিই এই সব সুপারিশ করেছে। ক’দিন আগেই এই জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশেই কর্নাটকের টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান মদন গোপাল বলেছিলেন, মাধ্যাকর্ষণ এবং পাইথাগোরাসের উপপাদ্যের শিকড় বেদে রয়েছে। তৃতীয় ভাষা হিসেবে সকলকে সংস্কৃত পড়ানোর প্রস্তাব, মনুস্মৃতি যাতে অবশ্যই পড়ানো হয়, সে ব্যাপারেও জোর দিয়েছিল ভাষা সংক্রান্ত কমিটি। সেই ধারা অনুসরণ করেই এল সাত্ত্বিক মিড ডে মিলের প্রস্তাব। শিক্ষাজগতের অনেকেরই প্রশ্ন, বেদের যুগে তো মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ ছিল না! খাবারে কোপ কেন তবে? পুরোটাই গৈরিকীকরণের রাজনীতি, দাবি বিরোধীদের।