কার্ল মার্কস এবং ভ্লাদিমির লেনিন। দুই প্রিয় নেতার নামের ছোঁয়া থাকুক সন্তানের নামেও। চেয়েছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দম্পতি। তাই বিজয় সিংহ এবং তৃপ্তা ওয়াহি তাঁদের মেয়ে অতিশীর দ্বিতীয় নাম রেখেছিলেন ‘মারলেনা’। মার্কস এবং লেনিনের নামের অংশ মিশিয়ে। পরে ‘মারলেনা’-ই নিজের পদবি করেন অতিশী। এখন অবশ্য পদবি বাদ দিয়ে শুধু নাম-ই ব্যবহার করেন তিনি।
১৯৮১ সালের ৮ জুন অতিশীর জন্ম দিল্লিতে। স্প্রিংডেলস স্কুলের পরে তিনি ইতিহাস নিয়ে স্নাতক হন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে। এর পরে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাড়ি দেন ইংল্যান্ড। স্কলারশিপ পেয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন। পরে নিজেই রোডস স্কলারে সম্মানিত হন।
কমিউনিস্ট ভাবধারা ও মুক্ত চিন্তার পরিবেশে অতিশীর বেড়ে ওঠা। তাঁর কমিউনিস্ট বাবা মায়ের প্রভাব প্রথম থেকেই সক্রিয় অতিশীর উপর। জনসেবা ও জন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার ইচ্ছে বরাবরই ছিল। উচ্চশিক্ষার পরে বিদেশে না থেকে তিনি চলে আসেন ভারতেই।
২০১১ সালে দেশ জুড়ে হওয়া দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন তিনি সমর্থন করেছিলেন বাইরে থেকেই। এই আন্দোলনের পরেই আম আদমি পার্টি জন্ম নেয় ২০১৩ সালে। আপ-এর জন্মলগ্ন থেকেই অতিশী এই দলের সঙ্গে জড়িত।
রাজনীতিকের পাশাপাশি অতিশী একজন শিক্ষাব্রতী। ২০১৫-র জুলাই থেকে ২০১৮-র এপ্রিল অবধি তিনি ছিলেন আপ-এর শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা। প্রথম থেকেই তাঁর লক্ষ্য ছিল খোলনলচে বদলে ফেলে দিল্লির শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে তোলার।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে অতিশী ছিলেন দক্ষিণ পূর্ব দিল্লির দায়িত্বে। নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পূর্ব দিল্লি কেন্দ্র থেকে। তবে বিজেপি প্রার্থী গৌতম গম্ভীরের কাছে তিনি ৪ লক্ষ ৭৭ হজার ভোটে পরাজিত হন।
সেই নির্বাচনের সময়ে পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় জাতিবিদ্বেষমূলক প্রচারপত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাতে ওই কেন্দ্রের আপ প্রার্থী, গৌতম গম্ভীরের প্রতিদ্বন্দ্বী অতিশী মারলেনা সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়েছিল। কুমন্তব্য ছিল তাঁর মা-বাবা সম্পর্কেও।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন অতিশী। সরাসরি গৌতম গম্ভীরের দিকে আঙুল তোলেন। উত্তরে, সব অভিযোগ অস্বীকার করেন গম্ভীর। আপ নেতৃত্বকে মানহানির নোটিস পাঠান তিনি।
চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনে অতিশী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দক্ষিণ দিল্লির কালকাজি কেন্দ্র থেকে। ১১ হাজারের বেশি ভোটে তিনি হারিয়ে দেন বিজেপি প্রার্থী ধর্মবীর সিংহকে।
তবে এ বার গণনার প্রথম ধাপ থেকে শেষ অবধি বজায় ছিল টানটান উত্তেজনা। কখনও মনে হয়েছে অতিশী জিততে পারবেন না। আবার পরের রাউন্ডেই প্রতিদ্বন্দ্বীকে টেক্কা দিয়েছেন তিনি।
জয়লাভের পরে অতিশী ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রত্যেক দিল্লিবাসীকে। তাঁর কথায়, অরবিন্দ কেজরীবালের কাজ দেখেই ভোট দিয়েছেন মানুষ।
তিনি কি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন? প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ। তাঁর উত্তর, দল যা বলবে, তিনি সেটাই করবেন।