হরিয়ানায় চলছে ভোটে। ছবি: এপি।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে টানটান উত্তেজনার আবহে সোমবার বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে। দুই রাজ্যে জয়ের প্রশ্নে বিজেপি প্রায় নিশ্চিত হলেও বিরোধীরা বলছে, ভোটের ঠিক এক দিন আগে দেশ জুড়ে যুদ্ধজিগির তুলে ভোটারদের প্রভাবিত করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে সরকারের কাজের এটিই প্রথম পরীক্ষা। ক্ষমতায় এসেই কাশ্মীরে রদ হয়েছে অনুচ্ছেদ ৩৭০। নাগরিক পঞ্জি প্রকাশিত হয়েছে অসমে। দু’টি বিষয়কে সামনে রেখে প্রচারে দেশপ্রেমের ঝড় তুলেছেন মোদী-অমিত শাহেরা। তেমনই উল্টো দিকে বিরোধীরা আশাবাদী যে, ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতি বিজেপির বিরুদ্ধে রায় দেবে। দু’রাজ্যেই এক দফায় ভোট। ফলপ্রকাশ ২৪ অক্টোবর।
বর্তমানে দুই রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ফলে ক্ষমতা ধরে রাখার দায় রয়েছে মোদী-শাহের। ২০১৪ সালে বিপুল ভাবে লোকসভায় জিতেও দিল্লি ও বিহার বিধানসভায় হেরেছিল বিজেপি। তাই এ বার মেপে পা ফেলছে তারা। শুরু থেকে দু’রাজ্যে দেশপ্রেমকেই প্রচারের প্রধান হাতিয়ার করে এগিয়েছে বিজেপি। শাসক শিবিরের স্বস্তি বাড়িয়েছে এবিপি নিউজ-সি ভোটার-সহ একাধিক জনমত সমীক্ষার ফলাফল। প্রায় সবক’টি জনমত সমীক্ষারই অনুমান, দুই রাজ্যে আরও আসন বাড়িয়ে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি-জোট। এ কথা ঠিক, জনমত সমীক্ষার ফল সব সময়ে মেলে না। কিন্তু এ ধাঁচের সমীক্ষা থেকে অনেকাংশেই জনমতের একটা আভাস পাওয়া সম্ভব হয়।
আর্থিক গতি শ্লথ হওয়ার বিষয়টা যে-ভাবে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে, তাতে উদ্বিগ্ন বিজেপি। ঘরোয়া মহলে তারা মানছে যে, অটো-রিটেল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাঁটাইয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আমজনতার উপরে। মহারাষ্ট্রে কৃষকদের পাশাপাশি অন্য পেশার সাধারণ মানুষও অর্থনীতির দুরবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ভোটের মুখে পঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ (পিএমসি) ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারিতে বিজেপি নেতাদের জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা, শরদ পওয়ারের সক্রিয়তা বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে মহারাষ্ট্রে। যে-কারণে জোটসঙ্গী শিবসেনাকে তুষ্ট করতে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদ
দেওয়ার ঘোষণাও করতে হয়েছে অমিত শাহকে।
বিজেপিকে সব চেয়ে বেশি ভরসা দিচ্ছে দু’রাজ্যেই কংগ্রেসের ছন্নছাড়া দশা। কংগ্রেসের অন্তঃকলহ, রাহুল গাঁধীর গা-ছাড়া প্রচার তাদের পক্ষে যাবে বলেই মত বিজেপির। যার ভরসায় হরিয়ানায় বিজেপি স্লোগান তুলেছে, ‘অব কি বার পঁচাত্তর পার’। অর্থাৎ বিধানসভার ৯০টি আসনের মধ্যে ৭৫টি কব্জা করে মসনদে আসার স্বপ্ন দেখছে তারা। যদিও রাজ্যের বেকারত্বের হার দেশের গড়ের তিন গুণ! ২৮ শতাংশের বেশি। তবু বিজেপির অনুমান, মোদীর ক্যারিশমা, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ ও দেশপ্রেমের জোয়ারে ভেসে ভোট আসবে ঝুলিতে।
বিরোধীদের দাবি, হরিয়ানায় বিজেপির আসন ৩০ পেরোবে না। অর্থনীতির বেহাল দশায় মানুষ ক্ষুব্ধ। হরিয়ানায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জাঠেদের বড় অংশ বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ। তারাও খট্টরের ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে দাবি বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতা অখিলেশ সিংহের দাবি, পরিস্থিতি অনুকূল নয় বুঝেই আজ সীমান্তে যুদ্ধের জিগির তুলেছে বিজেপি।