আলোচনা: নিজের কেন্দ্র বারাণসীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
করোনার দুনিয়া-জোড়া সঙ্কটের মধ্যেও মুখ তোলার লক্ষণ দেখাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি। এই অতিমারির ভয়াল থাবা থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে টেনে বার করে আনার চাবিকাঠিও রয়েছে সংস্কারে সাবলীল, দক্ষ ভারতীয়দের হাতে। বৃহস্পতিবার ‘ভারত-বিশ্ব সপ্তাহ, ২০২০’-র ভিডিয়ো বক্তৃতায় এমনই দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে জানালেন, এই সঙ্কটের সময়েও সংস্কারের রথ ছুটিয়ে কৃষি থেকে মহাকাশ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দরজা আরও হাট করে খুলে দিয়েছে তাঁর সরকার। প্রতিশ্রুতি দিলেন, বাইরে থেকে লগ্নিকারী এলে লাল ফিতের ফাঁস নয়, লাল-কার্পেট অভ্যর্থনা অপেক্ষা করবে।
কিন্তু বিরোধী শিবির এবং অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, বিদেশি বিনিয়োগ টানতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রী। ফেরি করছেন মসৃণ লগ্নির স্বপ্ন। কিন্তু টাকা ঢালতে আসা বিদেশি লগ্নিকারী বাস্তবের মাটিতে তার প্রতিফলন পাবেন তো?
মোদীর দাবি, “অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ভারতীয়দের মজ্জাগত। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ইতিমধ্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখাচ্ছে অর্থনীতি।” বিরোধীদের বক্তব্য, ‘আনলক’ পর্ব শুরু হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বার বার বলছেন ঠিকই। কিন্তু তার প্রতিফলন পরিসংখ্যানে কোথায়? দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ৪.৫ থেকে ৫ শতাংশ সঙ্কোচনের মুখে দাঁড়িয়ে। শিল্প সূচক তলানিতে। চাহিদায় ভাটা। বেকারত্বের হার আকাশছোঁয়া। জিএসটি-সহ রাজস্ব আদায় প্রত্যাশিত পরিমাণে না-হওয়ায় রাজকোষ ঘাটতি মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে থাকার কারণে কল-কারখানা সমেত অর্থনীতির ইঞ্জিন কবে ফের পুরোদস্তুর চালু হবে, অজানা। হাল সুবিধার নয় রফতানিরও। এর মধ্যে দাঁড়িয়ে মোদী কোথায় ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ খুঁজে পেলেন, প্রশ্ন তাঁদের।
আরও পড়ুন: করোনার প্রতিষেধক নিয়ে ‘আশার কথা’ প্রধানমন্ত্রীর মুখে
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনার এই সঙ্কটকে সুযোগে বদলে নিতে ঝোড়ো সংস্কারের পথে হেঁটেছে কেন্দ্র। এক দিকে কাজ হারানো কর্মী, দরিদ্রদের জন্য নিখরচার রেশন, রান্নার গ্যাস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনই ২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একের পর এক সংস্কার। তার দৌলতে লগ্নির বিপুল সম্ভাবনার দরজা খুলে গিয়েছে কৃষি-পরিকাঠামো, ছোট-মাঝারি শিল্প, স্টার্ট-আপ থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রে। তাঁর কথায়, “ভারতীয়রা সংস্কারে সাবলীল।…ভারতের মতো খোলা অর্থনীতি খুব কম দেশে রয়েছে। এ দেশে বিনিয়োগের জন্য সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। অভ্যর্থনার জন্য বিছিয়ে রেখেছি লাল কার্পেট। এমন বিপুল সম্ভাবনা খুব কম দেশেই মজুত।”
ভারতের মতো বিপুল সম্ভাবনাময় বাজার যে বিশ্বে খুব কম, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন থাকছে, ব্যবসা করার পথ সহজ হওয়ার (ইজ় অব ডুয়িং বিজনেস) ক্রমতালিকায় উপরে উঠে এলেও, এ দেশে বিনিয়োগের পথ বাস্তবে মসৃণ হয়েছে কতখানি? জমি-জট, লাল ফিতের ফাঁস, বিভিন্ন মন্ত্রকের অনুমতি নেওয়ার চক্করে নতুন বিনিয়োগ বা ব্যবসা করা এখনও যথেষ্ট ঝকমারি। ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় গড় সময়ও অনেক ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ দেশের তুলনায় এখানে বেশি লাগে। এই সমস্ত সমস্যার সমাধান না-হলে, কেন এ দেশে টাকা ঢালতে ভরসা পাবেন বিদেশি লগ্নিকারীরা?
এইচ-১বি ভিসা নিয়ে আমেরিকার কড়াকড়িতে সদ্য ‘হোঁচট খেয়েছে’ ভারত। তাই তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে নার্সিং— বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ ভারতীয় পেশাদারদের হাতেই যে বিশ্ব অর্থনীতির জিয়নকাঠি, এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে তা মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি মোদী।