মহুয়া মৈত্রের বক্তৃতা প্রশংসা করে টুইট কৌশিক বসুর। —ফাইল চিত্র
কৃষি আইন থেকে কৃষক আন্দোলন, পরিযায়ী শ্রমিক থেকে লকডাউন— লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বক্তব্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। মহুয়ার ওই ভাষণে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক যে আপ্লুত, টুইটারে তাঁর প্রতিক্রিয়াতেই তা স্পষ্ট। সোমবার লোকসভায় মহুয়ার ওই ভাষণের বিভিন্ন অংশ ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে ভাইরাল।
সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর জবাবি বক্তৃতায় বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের অবস্থানকে তীব্র আক্রমণ করেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া। তার মধ্যে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মহুয়ার মন্তব্যের অংশের জন্য স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনার পরিকল্পনা করেছিল সরকার পক্ষ। যদিও তা হয়নি। তবে ওই অংশ ছাড়াও সোমবার মহুয়া অন্যান্য বিষয়ে যা বলেছেন, তা নজর কেড়েছে সারা দেশ এবং বিশ্বের। তার সঙ্গে যুক্ত হল বর্তমানে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিকের নামও।
মহুয়ার ওই দিনের পুরো বক্তব্য টুইটারে শেয়ার করেছেন কৌশিক। লিখেছেন, ‘কৃষি আইন, পরিযায়ী শ্রমিক এবং আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে মহুয়ার বক্তব্য মর্মস্পর্শী। এই ভাষণ সারা বিশ্বের সেরা সংসদীয় বক্তব্যের মধ্যে অন্যতম বলে গণ্য হবে'।
কী বলেছেন মহুয়া? বলেছেন ‘সাহস’ আর ‘ভয়’-এর কথা। কেন্দ্রের মোদী সরকার ‘সাহস’-এর কথা বলছেন, কিন্তু সরকার যে আসলে ‘ভীতু’— একের পর এক বিষয় তুলে ধরে সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন মহুয়া। কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে বলেছেন, "কৃষকদের জন্য এক জন মন্ত্রীও নিযুক্ত করা হয়নি। যাঁরা ৯০ দিন অনশন করছেন, তাঁদের খাদ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থা দেখার জন্য এক জন মন্ত্রীও নিয়োগ করা হল না। অথচ সুইডেনের খুদে পরিবেশ আন্দোলনকর্মী বা আমেরিকার পপ স্টারের প্রতিক্রিয়ায় সরকারি ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক।’’ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়েও আক্রমণ করে মহুয়া বলেন, ‘‘আইন পাশ হল। দেশে বহু বছর ধরে বসবাস করা নাগরিকরা সঙ্কটের মুখে। অথচ সেই আইন প্রয়োগ করার জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্তও প্রস্তুত নয় সরকার। আর প্রশ্ন করলে বলছে, কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে।’’
পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে মহুয়ার তোপ, ‘‘২৪ ঘণ্টার নোটিসে লকডাউন ঘোষণার ‘সাহস’-এর জেরে অকথ্য দুর্দশা, অসংখ্য মৃত্য ঘটল, শ’ শ’ মাইল হাঁটলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। অথচ এই সরকার সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোনও কিছুই করল না। এটাই সাহস।’’ এই প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজে সরাসরি কোনও আর্থিক সাহায্য না থাকার বিষয় তুলে ধরে জে পি মর্গানের প্রাক্তন ব্যাঙ্কার মহুয়া বলেন, ‘‘২০২০ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি সবচেয়ে কম।’’ এ ছাড়াও পেট্রোল-ডিজেলে সেস, লকডাউন মোকাবিলায় সরকারের আর্থিক প্যাকেজ থেকে শুরু করে বাজেট— মহুয়ার কটাক্ষের বিস্তৃতি ছিল প্রায় সব বিষয়ে। সরব হয়েছেন দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনের পক্ষে টুইট করায় সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনার বিরুদ্ধেও।