ওড়িশার মহানদীর তীরে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম মুদুলিগাড়িয়া। নয়াগড় জেলার এই গ্রামে মাত্র ৩৫ পরিবারের বাস। এটাই ওড়িশার প্রথম ইকো গ্রাম।
জঙ্গল ঘেরা এই গ্রামের বাসিন্দারা নিয়ন্ত্রণ করেন গ্রামের যাবতীয় কাজ। তাঁদের পরিশ্রমেই এখানে গড়ে উঠেছে ইকো টুরিজম।
কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে এই গ্রামকে ইকো-ফ্রেন্ডলি করে তোলার পিছনে অবদান রয়েছে ফরেস্ট সার্ভিসের এক অফিসারের। তাঁর উদ্যোগেই এই গ্রামে এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন।
মহানদী বন্যপ্রাণ ডিভিশনের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার অংশুপ্রজ্ঞান দাস। বর্তমানে এই ইকোটুরিজমের ডেপুটি কনজারভেটরের নেতৃত্বেই এই এলাকায় গড়ে উঠেছে ইকোটুরিজম।
অংশু এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০১৬ থেকে শুরু হয় এই প্রকল্প। এর অধীনে গড়ে তোলা হয়েছে ৪৫টির বেশি ইকো টুরিজম।
সেই ইকো টুরিজম থেকে প্রতি বছর যে লাভ হয়, তার ৮০ শতাংশই মজুরি হিসাবে দিয়ে দেওয়া হয়। বাকি ২০ শতাংশ রক্ষাণাবেক্ষণ ও আধুনিকিকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়।
এই ইকো টুরিজম থেকে রোজগারের অঙ্কটাও জানিয়েছেন বন বিভাগের ওই কর্তা। প্রতি বছর এক কোটি টাকারও বেশি রোজগার হয়েছে এই ইকো টুরিজম প্রকল্প থেকে।
২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ মিলে দু’কোটিরও বেশি রোজগার হয়েছে। ফলে গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের রোজগার হয়েছে প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
এর আগে জঙ্গল থেকে মধু, কাঠ সংগ্রহ করে দিন চলত গ্রামবাসীদের। পানীয় জল তাঁরা সংগ্রহ করতেন মহানদী থেকেই। যে জল তাঁরা খেতেন, সেখানই স্নান করতেন গ্রামবাসীরা।
স্বাস্থ্য সচেতনতাও সেখানে ছিল না বললেই চলে। যততত্র মল-মূত্র ত্যাগই ছিল সেখানকার মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাস।
এই প্রকল্প আসার পর ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা। বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরি হওয়ায় ২০১৯-এ প্রকাশ্যে শৌচহীন গ্রামের মর্যাদা পায় এটি।
মহানদীর জল পরিশুদ্ধ করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায় এখন। আর পরিচ্ছনতা বৃদ্ধি হওয়ায়, রোগের প্রকোপও এক ধাক্কায় কমেছে অনেকটাই। পাশাপাশি ১০০ শতাংশ প্লাস্টিক মুক্ত গ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে এটি।
ইদানিং সেখানে অর্গানিক ভাবে চাষও শুরু হয়েছে। গোবর দিয়ে সারও তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটকদের আসা-যাওয়া বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ।
এ ভাবেই মুদুলিগাড়িয়া মহানদী পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইকো গ্রামের মডেল হয়ে উঠেছে। আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামকেও এ ভাবে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন অংশু।