Earthquake in Turkey and Syria

উদ্ধারকারীকে নিরামিষ খাবার পৌঁছে দিলেন তুরস্কের পুত্রহারা

দীপক তলওয়ার ভারতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অষ্টম ব্যাটেলিয়নের সদস্য। পদমর্যাদায় ডেপুটি কমান্ড্যান্ট। ভোজনে নিরামিষাশী। তুরস্কের গাজ়িয়ানটেপ প্রদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নুরদাগি-তে মোতায়েন ছিলেন দীপক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:২১
Share:

তুরস্কে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে ভারতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ছবি: রয়টার্স।

রসনার পার্থক্যে নাকি গড়ে ওঠে বিভেদ। কিন্তু সেই পার্থক্য যদি বন্ধুত্বের জন্ম দেয়— তা-ও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কে! সম্ভব হয়েছে এমনটাও। উদ্ধারকাজে যাওয়া বিদেশি ভারতীয় ‘বেরাদর’-এর জন্য জান কবুল করে নিরামিষ খাবার জুগিয়ে গিয়েছেন সদ্য পুত্রহারা এক পিতা। কাউকে বুঝতে না দিয়ে।

Advertisement

দীপক তলওয়ার ভারতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অষ্টম ব্যাটেলিয়নের সদস্য। পদমর্যাদায় ডেপুটি কমান্ড্যান্ট। ভোজনে নিরামিষাশী। তুরস্কের গাজ়িয়ানটেপ প্রদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নুরদাগি-তে মোতায়েন ছিলেন দীপক। ভূমিকম্পের পরদিনই, ৭ ফেব্রুয়ারি নুরদাগি পৌঁছে গিয়েছিল দীপকের দল। সেখানেই আলাপ পুত্রহারা আহমেদের সঙ্গে। অনুরোধ ছিল, ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে থাকা ছেলের মৃতদেহ বার করে দেওয়ার, যাতে অন্তত সমাহিত করা সম্ভব হয়। কিশোর পুত্রের মৃতদেহ আহমেদের হাতে তুলে দেন দীপক ও তাঁর সহযোগীরা।

পরের কয়েক দিন পুত্র-সহ পরিবারের চার সদস্যের অন্ত্যেষ্টির কাজে ব্যস্ত থাকেন আহমেদ। দীপকের কথায়, ‘‘কয়েক দিন পর হঠাৎ দেখি, আহমেদ এসে হাজির। কোনও ভাবে জানতে পেরেছেন— আমি নিরামিষ খাই। ভূমিকম্পের কারণে শহরে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তারই মধ্যে কোনও দিন টোম্যাটো, কোনও দিন আপেল এনে হাজির আহমেদ। স্থানীয় মশলা দিয়ে নিরামিষ তরকারি রান্না। নিঃশব্দে আমার হাতে খাবার গুঁজে দিয়ে চলে যেতেন। উদ্ধারের কাজে অন্যত্র গেলেও সেখানে পৌঁছে যেতেন আহমেদ।’’

Advertisement

বাড়িতে ১৮ মাসের যমজ শিশুসন্তানকে শাশুড়ির কাছে ছেড়ে তুরস্কের বিমান ধরেছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্য কনস্টেবল সুষমা যাদব। বিপর্যস্ত এলাকা থেকে কোনও ভাবে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। সুষমার কথায়, ‘‘কংক্রিটের একটি চাঙড় সরাতেই দেখা যায় প্রথমে এক পুরুষ, তাঁর নীচে এক জন মহিলা ও একেবারে তলায় একটি শিশু। দেখলেই বোঝা যায়, বাবা-মা দিয়ে সন্তানকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেছিলেন।’’

ভাষা সমস্যা সত্ত্বেও মায়ের সেই উদ্বেগ সম্ভবত বুঝতে পারেন তুরস্কের এক মহিলা। তিনিই মোবাইল ফোন জোগাড় করে দেন সুষমাকে। ঘরে কথা বলে শান্ত হন সুষমা। গতকাল নিজের বাসভবনে সেই সুষমার সঙ্গে আলাপচারিতার শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘আপনার মতো মহিলারাই দেশের অনুপ্রেরণা।’’ প্রসঙ্গত, এ বারই প্রথম বিদেশে বিপর্যয় মোকাবিলায় মহিলাদের পাঠিয়েছে ভারত।

বিপর্যয়ের পরের দিন তুরস্কের হাটায় পৌঁছনোর ছ’ঘণ্টার মধ্যেই অস্থায়ী হাসপাতাল চালু করে দিতে সক্ষম হয় ভারতীয় সেনা। প্রায় ১০-১১ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকা ওই হাসপাতালে প্রায় হাজার চারেক রোগীর চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল যদুবীর সিংহ বলেন, “চিকিৎসা চলতে থাকা এক আহতের পাশে বসা এক যুবক ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে আমার হাত ধরে প্রথমে চোখে ছোঁয়ায়। তার পরে হাতে চুমু খায়।” আমার কাছে ওই যুবক জানতে চায়, সে এটা কী করল! যদুবীর তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি আমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন?” তখন ওই যুবক জবাব দেন, “না। আপনি যে আমার পিতৃতুল্য— সেটাই বোঝালাম।”

দিল্লি ফিরে আসার পরেও মোবাইলে ধন্যবাদ বার্তা আছড়ে পড়ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ভি এন পরাশরের মোবাইলে। পরাশরের কথায়, “আমরা যখন চলে আসছি, তখন অধিকাংশের চোখে জল। অনেকেই এসে আমাদের ইউনিফর্মে লাগানো ব্যাজ চেয়ে বসেন দোস্ত ভারতের পাশে থাকার স্মৃতিকে মনে রাখতে।” পরিবর্তে সেই দেশের পুলিশ, সেনা, দমকল, সিভিল ডিফেন্স বাহিনী তাঁদের লোগো পরাশর ও তাঁর দলকে দিয়েছেন স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে, তুরস্ককে মনে রাখতে।

বিপর্যস্ত তুরস্কবাসী ও উদ্ধারকারী বাহিনীকে কাছে নিয়ে এসেছে বলিউড। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সাব-ইনস্পেক্টর সীমা আগরওয়ালের কথায়, শাহরুখ খান ও দীপিকা পাড়ুকোনের এক বিদেশি ভক্ত সীমার কাছে আবদার করেন, বলিউডের কিছু নাচের পদক্ষেপ শিখিয়ে দেওয়ার জন্য। সীমার কথায়, “বলিউডের প্রতি স্থানীয়দের ওই আগ্রহ মুহূর্তে দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে দু’পক্ষের।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement