দুষ্মন্ত চৌটালা
জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) নির্বাচনী প্রতীক চাবি। হরিয়ানায় সরকার গড়ার চাবিকাঠিও থাকবে সেই দলের হাতে। ভোট গণনা শুরুর পরেই জোর গলায় এই দাবি করছিলেন জেজেপির প্রতিষ্ঠাতা তথা কর্ণধার দুষ্মন্ত চৌটালা। দিনের শেষে সত্যিই তাঁকে ছাড়া সরকার গড়ার দাবি জানানোর জায়গায় নেই কংগ্রেস। অন্য দিকে, শুধু সাত নির্দলকে পাশে পেলে বিজেপি খাতায়-কলমে জেজেপিকে ছাড়া কুর্সি ধরে রাখতে পারবে ঠিকই। কিন্তু ‘পোক্ত’ সরকার গড়তে দুষ্মন্তের দলকে পাশে চাইছে তারাও। এক বছরেরও কম পুরনো দল নিয়ে ভোটে লড়ে এই চমকপ্রদ সাফল্য পকেটে পোরা মাত্র ৩১ বছরের দুষ্মন্তই তাই হরিয়ানার রাজনীতির নতুন নক্ষত্র! সরকার গড়তে সমর্থনের বিনিময়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাবও হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছে দল।
প্রপিতামহ দেবীলাল প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী, কিংবদন্তি জাঠ নেতা। দাদু ওমপ্রকাশ চৌটালা চার বারের মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিবারের হাতে গড়া ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলেই (আইএনএলডি) দুষ্মন্তের ভোট-রাজনীতির হাতেখড়ি। ২০১৪ সালে সব থেকে কমবয়সি সাংসদ হিসেবে দিল্লিতে পা। এই পর্যন্ত যাত্রা মসৃণ ক্যালিফর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে স্নাতকের।
কিন্তু এর পরেই তাঁর রাজনীতির গতিপথ আমূল বদলে দেয় তীব্র পারিবারিক বিবাদ। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির দায়ে দশ বছরের জন্য তিহাড় জেলে যান দাদু ওমপ্রকাশ। বাবা অজয় চৌটালাও জেলবন্দি। এই অবস্থায় কাকা অভয় চৌটালার সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না কিছুতেই। রাজনৈতিক দূরত্ব তো বাড়ছিলই, সেই সঙ্গে তেতো হচ্ছিল পারিবারিক সম্পর্কও। আর চৌটালা পরিবারের সেই ভাঙন থেকেই জন্ম জেজেপির। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আইএনএলডি থেকে বহিষ্কার। তার পরেই জিন্দে নতুন দল তৈরির ঘোষণা।
স্থানীয়রা বলছেন, দাদু এ ক্ষেত্রে কাকার পাশে দাঁড়ানোয় প্রচারে তাঁর কথা সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন দুষ্মন্ত। নিজেকে তুলে ধরেছেন দেবীলালের প্রকৃত উত্তরসূরি রূপে। তাঁকে ‘জননায়ক’ হিসেবে দাবি করে দলের সঙ্গে জুড়েছেন সেই শব্দ। বক্তৃতার মঞ্চে পাগড়ি বাঁধার ধরন থেকে জাঠ জাত্যভিমানকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা— এ বারের ভোটপ্রচারে দেবীলালের ছায়া মাথার উপরে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। সঙ্গে হাওয়া বুঝে অস্ত্র করেছেন কৃষির দুরবস্থা এবং বেকারত্বের কামড়কে।
প্রায় চার দশকে মনোহরলাল খট্টরই রাজ্যের প্রথম অ-জাঠ মুখ্যমন্ত্রী।
অথচ হরিয়ানায় ওই জাতিই অনুপাতে সব থেকে বেশি। তাঁদের বড় অংশের ক্ষোভ, রাজ্যের বাকি ৩৫টি জাতিকে এককাট্টা করে জাঠেদের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা ক্রমাগত করে গিয়েছে বিজেপি। সেই রাগ আরও বেড়েছে সরকারি চাকরিতে জাঠেদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব আদালতে খারিজ হওয়ার পরে তাঁদের প্রবল বিক্ষোভে খট্টর-সরকারের পুলিশ গুলি চালানোয়। এই জাঠ-রোষ যে তাঁর ভোট বাক্স ভরতে পারে, তা গোড়া থেকেই আঁচ করেছেন দুষ্মন্ত। এবং জাঠ ভোটের বড় অংশকে নিজের দিকে নিয়ে আসতে তিনি সফলও হয়েছেন।
জেজেপি সমর্থকেরা তাঁর শিক্ষিত, মার্জিত ভাবমূর্তিতে মজেছেন। যে আইএনএলডি গতবারও প্রধান বিরোধী দল ছিল, তারা জিতেছে ১টি আসন। ফলে পরিবারের ‘ইগোর লড়াই’ জেতার সঙ্গে হরিয়ানার নতুন আঞ্চলিক শক্তি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছে তাঁর দল। সরকার তৈরিতে কার পাশে দাঁড়াবেন, এ দিন স্পষ্ট করেননি দুষ্মন্ত। পোড়খাওয়া রাজনীতিকের মতো দর কষাকষির দরজা খোলা রেখে শুধু জানান, তা ঠিক করবে দলই। দিনভর যার সমর্থকদের অভিনন্দনের হাত এগিয়ে এসেছে তাঁর দিকে। আজ তো তাঁরই দিন।