গুয়াহাটির পাণ্ডু এলাকায় শেষ পর্বের ব্যস্ততা তুঙ্গে। নিজস্ব চিত্র
কলকাতায় মানুষ যখন হইহই করে পুজো দেখা শুরু করে দিয়েছে, গুয়াহাটির মণ্ডপ ও প্রতিমায় তখন রঙ চড়ানোর কাজ চলছে। তবে, তার মধ্যেও বেশ কিছু পুজো, গত দুই বছরের করোনার আতঙ্ক ঝেড়ে ফেলে এ বার ফের ধুমধাম করে আয়োজনে মেতেছে।
অবশ্য শিলং পাহাড়ের বুকে, ১৮৯৬ সালে শুরু হওয়া শিলঙের সনাতন ধর্মসভার পুজো তাদের উৎসব শুরু করে দিয়েছে মহালয়াতেই। লাবানে এখন হরিসভা নামেই বেশ পরিচিত সেই পুজোর এ বার ১২৫ বছর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রী সানবর সুলাই। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে থাকেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য জে বি ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে এসেছিলেন মেঘালয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে শিলংয়ে বিভিন্ন দুর্গাপুজো, কালীপুজো কমিটির প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। সঞ্জীববাবু বলেন, “দুর্গাপুজো আর শুধু এক ধর্মীয় উৎসবের গণ্ডিতে আটকে নেই। এ এক সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উদযাপন ও মহামিলনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কলকাতায় আমাদের বাড়িতে আগে পুজো হত। এখন ২০ বছর ধরে দুর্গাপুজো না হলেও বাড়িতে ১০ বছর ধরে কালীপুজো হচ্ছে। এই যে পুজো উপলক্ষে সকলের বাড়ি আসা, সকলের সঙ্গে দেখা হওয়া— সেটাই পুজোর আসল মজা ও মাহাত্ম্য।
এ দিকে, গুয়াহাটিতে বরাবরের নজরকাড়া পুজো ছত্রীবাড়ি সার্বজনীনের এ বারের আকর্ষণ কলম-পেনসিলের প্রতিমা আর গ্রন্থাগারের আদলে ১০ লাখের মণ্ডপ। থিম হল বইবিমুখ প্রজন্মকে ফের বইমুখো করা। মণ্ডপে সাড়ে ১৮ হাজার পেন-পেনসিলে তৈরি থিমের দুর্গার উচ্চতা হবে সাড়ে ৮ ফুট। আজ মূল মৃন্ময়ী প্রতিমা ১২ ফুটের। মণ্ডপে বিভিন্ন ভাষায় ১০ হাজার বই, পুরনো পত্রিকা রাখা হবে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিলি করা হবে হাজার খানেক বই। গুয়াহাটির অপর ভিড় টানা থিম পুজো বিষ্ণুপুর বিমলা নগর সার্বজনীন। এ বার সেখানে কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাট মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছেন খ্যাতনামা শিল্পী নুরুদ্দিন আহমেদ। বাজেট ২২ লক্ষ।
পাণ্ডুর নিউ কলোনি আজাদ হিন্দ ক্লাবের পুজোর এবার ৭০ বছর। তাদের মূল আকর্ষণ ২০ ফুটের প্রতিমা। সন্তান জন্ম দেওয়া, বড় করা থেকে শুরু করে এক মায়ের বিভিন্ন ত্যাগ ও কষ্ট ফুটিয়ে তুলবে তারা। দিসপুর সার্বজনীনে এ বার হরেক থিমের পসরা। থাকবে বাংলার গ্রাম, বিহু ইত্যাদি। কলকাতা থেকে ১২ লক্ষ টাকার আলো আনা হচ্ছে। গোকুল আবাসের মূল আকর্ষণ ১৫ ফুটের আদিযোগী মহাদেব। ট্রায়াঙ্গুলার রেল কলোনিতে ইকো-ফ্রেন্ডলি গ্রামের পুজোর থিম।
উলুবাড়ির ভোলানাথ মন্দিরও প্রতিবার নজর কাড়ে। ৫১ তম বর্ষে তাদের থিম পক্ষী সংরক্ষণ। একই সঙ্গে আজাদি কা অমৃৎ মহোৎসবকে জুড়ে দিতে বিরাট পায়রায় তেরঙার ছোঁয়াও থাকছে। লাল গণেশে শ্রী শ্রী সার্বজনীনের রজত জয়ন্তীতে বেলুড় মঠের আদলে মণ্ডপ গড়া হবে। প্রতিমা ও মণ্ডপ শিল্পী বাংলার। বাজেট প্রায় ২৫ লক্ষ। ধুবুড়ির গৌরীপুর রাজবাড়ির পুজো এ বার ১৭৩ বছরে পড়ল। প্রতিপদের দিনে অষ্টধাতুর প্রতিমাটি মহামায়া মন্দিরের পাশে দুর্গা মন্দিরে আনা হয়। পুজোর পরে গদাধর নদীতে ভাসান দেওয়া হয় শোলার প্রতিমা। পাশাপাশি, মাটিয়াবাগের হাওয়া মহলে পুজো হয় রামচণ্ডী দেবীর।