ছৌ-এর থিমে তৈরি দিল্লির এনসিআর এলাকায় বঙ্গতরুর পুজোমণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র
গত দু’বছরের শরৎ ডুবেছিল অন্ধকারে। উৎসব দূরস্থান, কোভিড-পর্বে দিল্লি হয়ে উঠেছিল এক জ্যান্ত কবরখানা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে এ বার প্রবাস মেতেছে উৎসবের আনন্দে। মণ্ডপ সাজছে রঙে, থিমে, উজ্জ্বল একান্নবর্তনে। হাত খুলে না হলেও, বিজ্ঞাপন আসছে। দিল্লিতে দুর্গাপুজো আসছে বাহারি প্ল্যাকার্ডে। আর থিমের স্বাতন্ত্র্যে। প্রবাসের পুজো এ বার বৈচিত্রে ভরপুর।
স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরকে স্মরণ করে রাজধানীর অন্যতম প্রাচীন পুজো করোল বাগের মণ্ডপের অগ্রভাগ লালকেল্লার আদলে তৈরি করা হয়েছে। ভিতরের কাপড়ে স্বাভাবিক ভাবেই ঝলমল করছে তেরঙ্গা। ৮১তম বছরে পা দেওয়া করোল বাগের পুজোর সাধারণ সম্পাদক দীপক ভৌমিক জানালেন, “প্রত্যেক বারের মতোই এ বারেও আমরা প্রতিমার ক্ষেত্রে সাবেকিয়ানা বজায় রেখেছি। বাগবাজারের টানা চোখ, ডাকের সাজ, একচালা ঠাকুর। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবকে মাথায় রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি দেওয়া হয়েছে মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরে। রয়েছেন ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা, সুভাষচন্দ্র।” তিনি জানালেন, গত দু’বছর বন্ধ থাকার পরে এ বার পুজোর প্রত্যেক দিন কয়েক হাজার মানুষ মণ্ডপে বসে ভোগ খাবেন। সন্ধ্যায় হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কলকাতা থেকে শিল্পীরা আসবেন, তাঁদের সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় প্রতিভারাও। নির্ভয়ে সিঁদুর খেলাও হবে অনেক দিন পর।
বয়সে এবং আভিজাত্যে নবীন এনসিআর এলাকার বঙ্গতরুর পুজো। কিন্ত থিমে এ বার তারা টেক্কা দিয়েছে দিল্লির বাঘা পুজোদের। পুজোর সভাপতি শুভেন্দু মজুমদার বলছেন, “সুরজকুণ্ডের মেলায় গিয়ে ছৌ-এর মুখোশ বিক্রেতা এবং শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। শুনেছিলাম কোভিডে তাঁদের বেহাল অবস্থার কথা। তা ছাড়াও গোটা দেশে তাঁদের কোনও পরিচিতি নেই। বিদেশে মাঝে মাঝে ডাক এলেও অর্থের অভাবে এই শিল্প ধুঁকছে। তখনই মাথায় পরিকল্পনা আসে।” বঙ্গতরুর এ বারের পুজোর থিম ছৌ। ছৌ মুখোশের আদলে প্রতিমার মুখ। মণ্ডপেও এই শিল্পের বিভিন্ন নিদর্শন। স্থির হয়েছে, পুজোর মধ্যে ছৌ নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে টক শো, তাঁদের অনুষ্ঠান চলবে। বিসর্জনেও ছৌ নৃত্যের সঙ্গে সঙ্গে এগোবে প্রতিমা। শুভেন্দুবাবু জানাচ্ছেন, “আসলে এই এলাকায় যাঁরা পুজো দেখতে আসেন, তাঁদের মধ্যে সংখ্যাগুরু অংশ অবাঙালি। ফলে বিরাট একটা মঞ্চে গোটা দেশের মানুষ এই নাচ সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।”
৫৭ বছরে পা দিল পটেলনগর পুজো সমিতি। ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’-এর অভিভাবকত্বে এই পুজো এ বার উদ্যাপন করছে আন্তর্জাতিক বাজরা বছর (২০২২-২৩)। জোয়ার, বাজরার ভোগ দেওয়া হবে একটি স্লোগানের সঙ্গে— ‘বাজরা খান, সুস্থ থাকুন’। আর একটি— ‘নিরাপদ ভোগ, আনন্দের উৎসব’। পরিবেশবান্ধব এই মণ্ডপে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। তালপাতায় দেওয়া হবে ভোগ।
অনেক দিন পরে নস্টালজিয়ায় মন ভাসাতে প্রবাসী বাঙালিরা যাবেন প্রাচীন কাশ্মীরি গেটের পুজো দেখতে। বর্তমানে দিল্লির আলিপুর রোডের বেঙ্গলি সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে পুজো অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১০ সালে এটি একটি বারোয়ারি পুজো হিসেবে শুরু হয়। একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পুজো চিরন্তন, অমলিন। মূর্তিগুলিতে ডাকের সাজ। মণ্ডপ চত্বরে মনকাড়া গন্ধের বিরিয়ানির স্টল। এ সবই বন্ধ ছিল গত দু’বছর। এ বার ফিরে পাওয়ার পালা।