ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ বা দিল্লি সরকার বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে যে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প নিয়েছে, তা জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী বলেই মনে করছে কেন্দ্র। সূত্রের মতে, বিভিন্ন রাজ্যের ওই পদক্ষেপ রুখতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক। খাদ্য মন্ত্রক সূত্রের মতে, মূল আইন অনুযায়ী এ ধরনের পদক্ষেপ করা যায় না। এর ফলে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’-এর রূপায়ণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সাধারণ মানুষের বাড়ি-বাড়ি রেশন পৌঁছে দিতে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। একই ধরনের প্রকল্প নেয় দিল্লি ও অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। কিন্তু এ ধরনের প্রকল্প জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী বলে দাবি কেন্দ্রের। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার জন্য যে নোট তৈরি হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের ১২ নম্বর ও ২৪(২) ধারায় খাদ্যশস্য রেশন দোকানে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কখনওই তা উপভোক্তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়নি। কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, রেশন দোকানের বাইরে অবিক্রীত খাদ্যশস্য বার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, ওই খাদ্যশস্য রেশন দোকান থেকেই বিক্রি করতে হবে। তা ছাড়া, বাড়িতে রেশন পৌঁছে দেওয়ার জন্য যদি উপভোক্তাকে দিল্লি ও অন্ধ্রপ্রদেশের মতো অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়, তা হলে তা দেশ জুড়ে সমস্ত মানুষকে এক দামে খাদ্যশস্য দেওয়ার কেন্দ্রীয় আইনের পরিপন্থী।
তা ছাড়া, কেন্দ্র মনে করছে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার যে নীতি রাজ্যগুলি নিয়েছে, এর ফলে রেশন ডিলারদের অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। এমনিতেই অর্থ সঙ্কটে ভুগছেন রেশন ডিলারেরা। তার উপরে এ ধরনের বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি হলে রেশন ব্যবস্থার পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেন্দ্রের ওই যুক্তিকে সমর্থন করেছেন ‘অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস
ফেডারেশন’-এর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু। তিনি বলেন, ‘‘রেশন দোকানগুলির যা অবস্থা, তাতে কোনও ভাবেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। পরিকাঠামোগত অভাবের পাশাপাশি আর্থিক সংকটে ভুগছে রেশন দোকানগুলি। আমরা গোড়া থেকেই বিভিন্ন রাজ্য সরকারের ওই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে এসেছি।’’
যদিও রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প রূপায়ণে সরকার বদ্ধপরিকর। প্রয়োজনে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্প রূপায়ণের পথ বার করা হবে।
ক্যাবিনেট নোটে বলা হয়েছে, রাজ্যের তরফে বাসিন্দাদের কেন্দ্রীয় সাহায্যের বাইরে খাদ্যশস্য দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু রাজ্য কেন্দ্রের ধার্য করা মূল্যের চেয়ে কম দামে খাদ্যশস্য বিতরণ করছে। এর ফলে নাগরিকদের মধ্যে বিশেষত পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রকের সূত্রের মতে, এক জন শ্রমিক ‘এক দেশ এক রেশন কার্ডে’র আওতায় অন্য রাজ্যে কাজের সূত্রে গিয়ে রেশন নিতে পারেন। কিন্তু সেই রাজ্যে কেন্দ্রের ধার্য করা দামের চেয়ে কম দামে খাদ্যশস্য রেশন দোকান থেকে বিক্রি হলে সেই ব্যক্তির খাদ্যশস্যের প্রকৃত দাম নিয়ে সন্দেহ হবে। এ ধরনের একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন রাজ্য থেকে জমা হয়েছে কেন্দ্রের কাছে।
সেই কারণে ক্যাবিনেট নোটে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, আগামী দিনে আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে গোটা দেশে কেন্দ্র থেকে পাঠানো খাদ্যশস্য এক দামে বিক্রি করতে হবে রেশন দোকানগুলিকে। কেন্দ্রীয় দামের চেয়ে কম দামে কোনও ভাবেই যাতে রাজ্যগুলি খাদ্যশস্য বিক্রি করতে না পারে, তার জন্য আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যগুলির কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে, যদি তারা ব্যক্তি পিছু কেন্দ্রীয় সাহায্যের সঙ্গেই অতিরিক্ত খাদ্যশস্য দিতে চায়, উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি আর্থিক সাহায্য পাঠিয়ে দিক। তবে রাজ্যগুলি আদৌ ওই প্রস্তাব মানবে কি না, তা নিয়ে প্রবল সংশয় রয়েছে খাদ্য মন্ত্রকের কর্তাদের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় সূত্রের মতে, যেহেতু বেশ কিছু রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রকল্পকে কার্যত নিজেদের প্রকল্প বলে চালানোর অভিযোগ রয়েছে, তাই আগামী দিনে রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রকল্প যাতে মিশে না যায়, তার জন্য পদক্ষেপ করার পক্ষপাতী নরেন্দ্র মোদী সরকার। সূত্রের মতে, ইতিমধ্যেই ওই ক্যাবিনেট নোটটি নীতি আয়োগ, অর্থ মন্ত্রক, আইন মন্ত্রক, মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক, শিক্ষা মন্ত্রক, সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই মন্ত্রকগুলির নিজস্ব পর্যবেক্ষণ এলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা ক্যাবিনেটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রক।