অভিযুক্ত অবিনাশ পওয়ার। ছবি: সংগৃহীত।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং মদ্যপানই কাল হল। নেশার ঘোরে নিজের পুরনো কীর্তি বন্ধুদের সামনে উগরে দেওয়ায় শেষমেশ ৩০ বছর পর পুলিশের জালে পড়লেন জোড়া খুনে অভিযুক্ত এক ব্যক্তি।
অবিনাশ পওয়ার। বছর উনপঞ্চাশের এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক দম্পতিকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। সাল ১৯৯৩। অবিনাশের বয়স তখন ১৯। ওই বয়সেই অপরাধে হাত পাকিয়ে ফেলেছিলেন। মুম্বইয়ের লোনাভালায় এক প্রৌঢ় দম্পতির বাড়িতে ডাকাতি করেন দুই সঙ্গীকে নিয়ে। শুধু ডাকাতিই নয়, দম্পতিকে খুনও করেন। সেই ঘটনার পর অবিনাশের দুই সঙ্গী গ্রেফতার হয়। কিন্তু পুলিশের নজর এড়িয়ে দিল্লি পালিয়ে যান অবিনাশ।
লোনাভালাতে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন অবিনাশ। সেই খুনের ঘটনার পর থেকে মাকে একা রেখেই মুম্বই ছেড়ে পালান তিনি। তার পর আর লোনাভালাতে পা রাখেননি। পুলিশ সূত্রে খবর, দিল্লিতে কয়েক বছর কাটানোর পর মহারাষ্ট্রের অওরাঙ্গাবাদে ফিরে আসেন অবিনাশ। সেখানে নিজেকে অমিত পওয়ার হিসাবে পরিচয় দেন। ওই পরিচয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সও বার করেন অবিনাশ। কয়েক বছর গাড়িচালকের কাজ করেন। তার পর সেখান থেকে পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড়। সেখানে কিছু দিন কাটানোর পর আহমেদনগরে থাকা শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও বেশি দিন থাকেননি তিনি। তার পর আবার মুম্বইতেই ফিরে আসেন অবিনাশ। সেখানে ভিকরোলিতে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন।
এখানেও অমিত পওয়ার নামে নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন। ওই নামে আধার কার্ডও বানান। বিয়ে করেন। শুধু তাই-ই নয়, স্ত্রীকে রাজনীতিতে নামিয়ে ভাল জায়গাও তৈরি করে নিয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালের পর থেকে প্রায় ৩০ বছর পুলিশের নজর এড়িয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই দিন কাটছিল অবিনাশের।
কিন্তু তাল কাটল মদের এক আসরে। অপরাধ করেও ৩০ বছর ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দিব্যি স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাচ্ছেন, বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন অবিনাশ। এত বছর যখন ধরা পড়েননি, আর ধরা পড়বেন না, এমনই ধারণা ছিল তাঁর। কিন্তু কথায় আছে, আত্মবিশ্বাস ভাল, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ভাল নয়। অবিনাশের ক্ষেত্রে সেটাই হল। মদের আসরে নেশার ঘোরে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের অতীতের কীর্তির কথা গলগল করে উগরে দিয়েছিলেন। আর সেই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে ধরিয়ে দিল পুলিশের হাতে।
মুম্বই পুলিশের অপরাধ শাখার ডেপুটি কমিশনার রাজতিলক রোশন বলেন, “অবিনাশ পওয়ার ৩০ বছর আগে জোড়া খুন করে পালিয়েছিলেন। যে দম্পতিকে অবিনাশ খুন করেছিলেন, তাঁরা তাঁকে ভাল ভাবে চিনতেন। কারণ ওই দম্পতির বাড়ির সামনেই অবিনাশের দোকান ছিল। তাঁর দুই সঙ্গী ধরা পড়লেও পরিচয় গোপন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন অবিনাশ।”