সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রকাশ কারাট। শনিবার কান্নুরে। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের কোনও সমঝোতা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্নে টানা জল্পনায় এ বার বরফ-ঠান্ডা জল ঢেলে দিলেন প্রকাশ কারাট! তাঁর সাফ কথা, সাম্প্রদায়িক বিজেপি-আরএসএসের মোকাবিলায় তাঁরা গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। যে তৃণমূল বাংলায় পঞ্চায়েত থেকে পুরভোট ‘লুট’ করে, বিরেীধীদের উপরে হামলা চালায়, তাদের তাঁরা ‘গণতান্ত্রিক’ শক্তি বলে ধরে নিতে নারাজ।
হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েই গৃহীত হয়েছে সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন। বাংলার ক্ষেত্রে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব ধরনের শক্তিকে একজোট করার কথাও বলা হয়েছে সেখানে। এর পরেও তৃণমূল সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন কারাট। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা কি তৃণমূলকেও বৃহত্তর ঐক্যের অংশীদার ধরবেন? পার্টি কংগ্রেসের চতুর্থ দিনের বিরতিতে সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘যারা নির্বাচনে ভোট লুট করে, আমাদের মতো বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে লাগাতার হামলা চালায়, সেই তৃণমূলকে গণতান্ত্রিক শক্তি বলে মনে করি না! তবে এটা ঠিক যে, তারা এখন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথাই বলছে। তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করুক, আমরাও আমাদের লড়াই লড়ব। আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
কারাটের পেশ করা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্টের উপরেই পার্টি কংগ্রেসের শেষ পর্বে আলোচনা চলছে। বাংলার তরফে জামির মোল্লা, কল্লোল মজুমদারেরা বিবরণ দিয়েছেন, কী কঠিন পরিস্থিতিতে রাজ্যে তাঁদের দল ও সংগঠনের কাজ করতে হচ্ছে। এই সূত্র ধরেই কারাটও এ দিন বাইরে বলেছেন, যে তিন রাজ্যের ঘাঁটির উপরে দেশে বাম আন্দোলন ও সংগঠন দাঁড়িয়েছিল, তার মধ্যে বাংলা ও ত্রিপুরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ায় জাতীয় স্তরেও সিপিএম দুর্বল হয়েছে। আত্মসমালোচনার মনোভাব নিয়ে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ত্রুটি-বিচ্যুতির পর্যালোচনা করার পাশাপাশিই বাংলা ও ত্রিপুরা, পূর্বের দুই রাজ্যেই ‘ফ্যাসিবাদী’ কায়দায় হামলা চলছে বলে কারাটের অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলায় সদ্য পুরভোট হয়েছে। কী ভাবে নির্বাচন হয়েছে, সকলেই দেখেছেন। ভোটের আগে থেকে ওখানে রিগিং শুরু হয়! পুরসভা বা পঞ্চায়েতে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতেই বাধা দেওয়া হয়। আর যেখানে কেউ লড়াইয়ে থাকে, সেখানে ভোটের দিন প্রহসন হয়!’’ বাংলায় গত চার বছরে তাঁদের ৩৪ জন কর্মী-সমর্থককে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন কারাট। বলেছেন বাম-সহ বিরোধীদের নামে ‘মিথ্যা মামলা’র কথাও।
সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের মতে, কেরলের পরিস্থিতি অবশ্যই এর ব্যতিক্রম। দক্ষিণী এই রাজ্যে এলডিএফ সরকারের কাজকে ‘বিকল্প মডেল’ হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে পার্টি কংগ্রেসে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গেই মোদী সরকারের ‘ন্যাশনাল মানিটাইজ়েশন পাইপলাইন’ প্রকল্পের নামে জাতীয় সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া এবং দেশ জুড়ে বেড়ে চলা মহিলাদের উপরে আক্রমণ ও নারী নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদেও পৃথক প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।
নানা নির্বাচনে বামেদের বিপর্যয়ের মধ্যেও সাম্প্রতিক কালে সিএএ-বিরোধী এবং কৃষক আন্দোলনে বাম সংগঠনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও জনসমর্থন পাওয়ার বিষয়টি ‘ইতিবাচক’ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে পার্টি কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্টে।