সাবরমতী আশ্রমের ভিজিটর্স বুকে ডোনাল্ড ও মেলানিয়া ট্রাম্পের লেখা ও সই।
সাবরমতী আশ্রমে গেলেন। মালা দিলেন গাঁধীর প্রতিকৃতিতে। এমনকি, চরকা কাটার চেষ্টাও করলেন। তবে আশ্রমের ভিজিটর্স বুকে গাঁধীর কথা না লিখে শুধু বন্ধু নরেন্দ্র মোদীর কথাই লিখলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার জেরে বিতর্কের মুখে পড়তে হল ট্রাম্পকে।
গাঁধীর স্মৃতিবিজড়িত আশ্রমে ট্রাম্প আসবেন কিনা, সফরের আগের দিন পর্যন্তও তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু নয়াদিল্লির তরফে ওয়াশিংটনকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আমদাবাদে এসে সাবরমতীতে না গেলে ভারতে ভুল বার্তা যাবে। গাঁধী আশ্রমে যেতে রাজি হন ট্রাম্প। আজ দুপুরে বিমানবন্দর থেকে সোজা পৌঁছন সাবরমতীতে। তার কয়েক মিনিট আগেই পৌঁছে যান নরেন্দ্র মোদীও। খদ্দরের উত্তরীয় পরিয়ে তাঁদের স্বাগত জানানো হয়। আশ্রমে জুতো পরে ঢোকার অনুমতি নেই। বারান্দায় ওঠার আগে জুতো খুলে রাখেন ট্রাম্প। মোজা পরে নেন মেলানিয়া। গাইড ছাড়া নিজেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে আশ্রম ঘুরিয়ে দেখান মোদী।
সব মিলিয়ে পনের মিনিট। আশ্রমের যে ঘরটিতে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ও তাঁর স্ত্রী কস্তুরবা থাকতেন, সেই হৃদয়কুঞ্জে যান ট্রাম্প-মেলানিয়া। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাবরমতীর গুরুত্ব বোঝান মোদী। পরে মালা হাতে আশ্রমের বারান্দায় টাঙানো গাঁধীর ছবির সামনে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। মালার এক প্রান্ত নিজের হাতে রেখে অন্য প্রান্ত তুলে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে। ছবিতে মালা পরান দু’জনে মিলে। গাঁধীর ছবিতে নমস্কার করে ট্রাম্প-মেলানিয়াকে নিয়ে মোদী পৌঁছন বারান্দায় রাখা চরকার সামনে। আশ্রমিক মহিলারা চরকা ও খাদির গুরুত্ব বোঝান ট্রাম্পকে। হাতে তুলো নিয়ে চরকা কাটারও চেষ্টা করেন ট্রাম্প। প্রশ্ন করতেও দেখা যায় তাঁকে। পরে আশ্রমের বারান্দার মেঝেকে কিছু ক্ষণ পাশাপাশি বসে থাকেন তিন জন।
আরও পড়ুন: আগুন জ্বলছে দিল্লি, মৃত্যু ৪ জনের
মুম্বইয়ের গাঁধী সংগ্রহালয়ের ভিজিটর্স বুকে বারাক ওবামার লেখা ও সই।
ভারত সরকারের তরফে গাঁধীর বিখ্যাত তিন বাঁদরের মূর্তি উপহার দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। সেই তিন বাঁদর, যারা খারাপ কথা বলে না, শোনে না। এমনকি, খারাপ কিছু দেখেও না। মোদীই মূর্তিগুলির উপরের পর্দা সরিয়ে বিষয়টি বোঝান। কৌতূহলের সঙ্গে সেগুলি দেখেন ট্রাম্প-মেলানিয়া। এগুলি ভাল ভাবে দেখার জন্য সামনে এগিয়ে আসতেও দেখা যায় ট্রাম্পকে। আশ্রমের তরফে গাঁধীর আত্মজীবনীর কপি, পেনসিলে আঁকা গাঁধীর ছবি ও একটি চরকা উপহার দেওয়া হয় ট্রাম্পকে।
মোদী-ট্রাম্প যুগলবন্দি
• আমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে স্টেডিয়াম: পাঁচবার কোলাকুলি
ট্রাম্প: মোদীর পক্ষে কথা
• ধর্মীয় স্বাধীনতা বা কাশ্মীর নিয়ে মোদীকে অস্বস্তিতে না ফেলা
• মোদীকে সবাই ভালবাসেন, তবে উনি খুব কড়া
• মোদী বড় প্রজাতন্ত্রের সফল নেতা
• চা-ওয়ালা থেকে মোদীর উত্থান ভারতবাসীর সামনে উদাহরণ
ট্রাম্প: মোদীর অস্বস্তি
• জঙ্গি দমনে ইতিবাচক ভূমিকা পাকিস্তানের
নিজের ভোটের প্রচার
• আমেরিকায় অর্থনীতি তুঙ্গে, পরিস্থিতি উৎসাহব্যঞ্জক
• আমেরিকায় বেকারত্ব রেকর্ড পরিমাণ তলানিতে
• ব্যবসার সুযোগ রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতায়
• ৪০ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান সব ক্ষেত্রে দক্ষ
মোদী: ট্রাম্পের প্রশংসায়
• ট্রাম্পের ভাবনা বিশাল
• আমেরিকার ভারতীয়দেরও সম্মান করেন ট্রাম্প
• ‘সুখী আমেরিকা’ গড়তে মেলানিয়ার অবদান
• ইভাঙ্কার কাজের প্রভাব সুদূরপ্রসারী
• ট্রাম্প জমানায় ভারত, আমেরিকা সম্পর্ক গভীরতম
নিজের প্রশংসা
• মোতেরা বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম
• বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বিমা ভারতে
• শৌচালয় প্রকল্প
• সকলের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিশ্বরেকর্ড
শেষ পর্বে ট্রাম্পের দিকে ভিজিটর্স বুক এগিয়ে দেন মোদী। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা লিখেছেন, তাতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। তিনি লিখেছেন, ‘‘এই দারুণ সফরের জন্য আমার আসাধারণ বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ।’’ ক্ষোভ প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির টুইট ‘‘গাঁধী কে ছিলেন, সেটা উনি জানেন তো?’’ ট্রাম্পের এই লেখার সঙ্গে অনেকে তুলনা টেনেছেন গাঁধীকে নিয়ে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মন্তব্যের। ২০১০ সালে ভারতে এসে ওবামা লিখেছিলেন, ‘‘গাঁধীর স্মৃতিচিহ্ন দেখার সুযোগ পেয়ে আশা আর অনুপ্রেরণায় মন ভরে গেল। তিনি ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের নায়ক।’’ বিতর্কের পরে মোতেরা স্টেডিয়ামে পৌঁছে বক্তৃতায় সাবরমতী প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘এখান থেকে কিছু দূরে গাঁধীর আশ্রমে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। ওখান থেকেই লবণ পদযাত্রা শুরু করেছিলেন গাঁধী।’’