আলিঙ্গন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার হায়দরাবাদ হাউসে। ছবি: পিটিআই।
ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ‘অসামান্য কাজ’ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি খুবই শান্ত এবং ধার্মিক। দিল্লি ছাড়ার আগে সাংবাদিক বৈঠকে এমন কথাই বলে গেলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই ‘অসামান্য কাজ’ সত্ত্বেও আজ গভীর রাতে ভারত-আমেরিকার যে যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশ করা হল, তাতে ‘স্বাধীনতার গুরুত্ব’, ‘সমস্ত নাগরিকের সমান অধিকার’, ‘মানবাধিকার’, ‘আইনের শাসনের’ মতো বিষয়গুলি একেবারে গোড়াতেই জায়গা করে নিল। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প মোদীকে ধর্মীয় উদারতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরলেও যৌথ বিবৃতিতে আমেরিকার চাপেই উপরোক্ত বিষয়গুলি রাখতে হয়েছে নয়াদিল্লিকে। ট্রাম্প মুখে না বললেও বিষয়গুলি নিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক ভূমিকায় মার্কিন ‘উদ্বেগ’ এ ভাবেই জায়গা করে নিল যৌথ কূটনৈতিক দলিলটিতে।
তিন দিন আগে ওয়াশিংটন থেকে জানানো হয়েছিল, সিএএ-এনআরসি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ নয়াদিল্লিকে জানাবেন ট্রাম্প। জনসভাতেও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে সরব হবেন। কিন্তু ৩৬ ঘণ্টার ভারত সফরে প্রকাশ্যে সে পথ মাড়াননি ট্রাম্প। উল্টে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা নিয়ে মোদীর ভূমিকার প্রশংসাই করেছেন। জানিয়েছেন, সিএএ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কোনও আলোচনাই হয়নি। তাঁর থাকাকালীনই দিল্লিতে চলা হিংসা নিয়েও একই ভাবে বলেন, তিনি এ ব্যাপারে শুনেছেন ঠিকই, কিন্তু বিষয়টি নিতান্তই ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’। ভারত সরকার সিএএ নিয়ে নিজের দেশের জন্য ঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলেই ট্রাম্প মনে করেন। সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘‘ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে মোদী অসাধারণ কাজ করছেন। তিনি এ ব্যাপারে উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই চলেন। অন্য অনেক জায়গার থেকে ভারতের পরিস্থিতি এ ব্যাপারে ভাল।’’
কিন্তু তিনি ফিরতি বিমানে চড়ার পর যে যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশ করে সাউথ ব্লক, সেখানে বলা হয়েছে, ‘সমস্ত সার্বভৌম ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাষ্ট্রই স্বাধীনতার গুরুত্ব, সমস্ত নাগরিকদের সমান অধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসনকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।’’ প্রশ্ন উঠছে, মার্কিন কংগ্রেসের একটি বড় অংশের চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারতে এসে সিএএ নিয়ে মুখ না খোলা বা ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা অথবা কাশ্মীর থেকে ৩৭০ প্রত্যাহারের পর সেখানকার মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্ন না তোলার পিছনে কি এক ধরনের কৃতজ্ঞতা বোধ কাজ করেছে ট্রাম্পের? তবে রাতের যৌথ বিবৃতি থেকে স্পষ্ট, মুখে না বললেও যৌথ বিবৃতিতে নাগরিকদের সমানাধিকার, মানবাধিকার বা স্বাধীনতার বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে আমেরিকারই চাপে।
আরও পড়ুন: নতুন উচ্চতায় সম্পর্ক, দাবি মোদী-ট্রাম্পের
সকালে হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে দেওয়া বিবৃতিতে ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, দু’দেশই গণতন্ত্র, সংবিধানের ঐতিহ্যকে মূল্য দিয়ে থাকে। আমাদের সংবিধান ব্যক্তি স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করে।’’
বৈঠকের দশ দফা: প্রাপ্তি ও প্রতিশ্রুতি
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ট্রাম্পের সফরে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি বলতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কয়েকটি চুক্তি। সেটাও ৩৫৩ কোটি ডলারের বিনিময়ে কিনতে হয়েছে ভারতকে। বড় মাপের বাণিজ্য চুক্তি করার আশ্বাস ট্রাম্প দিলেও তা নিয়ে কোনও সময়সীমা নেই। বাকি পুরোটাই বন্ধুত্বের ছবি তুলে ধরা হয়েছে সাউথ ব্লকের তরফে। এই বছরেই আমেরিকায় নির্বাচন। মোদীর তৈরি করা মঞ্চ থেকে ট্রাম্প ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ভোটারদের মন জয়ের জন্য প্রচার চালিয়েছেন — এমনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমদাবাদে মোদী যে ভাবে ভিড় জড়ো করেছেন, তা নিয়ে আজ সকালে হায়দরাবাদ হাউসে এবং সন্ধ্যার সাংবাদিক বৈঠকে বারবার প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। একাধিক বার বলেছেন, ‘‘ভারতে জনসংখ্যা বেশি। কিন্তু আমি শুনলাম, গত কাল যে ভিড় হয়েছিল, তা এর আগে কোনও রাষ্ট্রনেতার জন্য হয়নি।’’ মোদীও তাঁর বক্তৃতায় ট্রাম্পের সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ দাবি করে বলেন, ‘‘গত আট মাসে আমি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাঁচ বার বৈঠক করলাম। কাল মোতেরা স্টেডিয়ামে ট্রাম্পের জন্য অভূতপূর্ব এবং ঐতিহাসিক স্বাগতসভা চিরকাল মানুষ মনে রাখবেন।’’