চরকায়: সাবরমতী গাঁধী আশ্রমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সস্ত্রীক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।
সফরের প্রাক্কালে যে ভাবে গর্জেছিলেন, মোতেরা স্টেডিয়ামে ততটা বর্ষালেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমদাবাদের উৎসবমুখর পরিবেশে আজ সিএএ-এনআরসি অথবা কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের মতো অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ তুলে মোদী সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেললেন না তিনি। অন্য দিকে, পাছে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রসঙ্গটি পাকেচক্রে উঠে আসে, সেটা আঁচ করে ‘বহুত্ববাদ’ এবং ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের’ পতাকা প্রথমেই উড়িয়ে রাখলেন প্রধানমন্ত্রীও।
দু’দিন আগে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের ভারত সফর নিয়ে এক দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠক করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, ভারতে সিএএ-এনআরসি নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গটি নিজের বক্তৃতায় এবং পৃথক ভাবে মোদীর সঙ্গে তুলবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ কিন্তু এই প্রসঙ্গে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের অবস্থানই নিলেন ট্রাম্প। বক্তৃতায় বললেন, ‘‘ভারত এমন একটি দেশ যা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, মানুষের সম্মান ও উদারতাকে গৌরবজনক ভাবে একাত্ম করে নিয়েছে। গোটা বিশ্ব সর্বদাই আপনাদের দেশের প্রশংসা করে, কারণ ভারতে লক্ষ লক্ষ হিন্দু, মুসলমান, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান এবং ইহুদি সম্প্রীতির সঙ্গে নিজেদের ধর্মাচরণ করে এসেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা একশোটিরও বেশি ভাষায় কথা বলেন।...তা সত্ত্বেও একটি মহৎ রাষ্ট্র হিসেবে আপনারা পোক্ত ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।’’
সফরসঙ্গী
• ফার্স্ট লেডি, ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়া
• মেয়ে তথা প্রেসিডেন্টের সহযোগী ইভাঙ্কা
• জামাই ও সিনিয়র উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার
• বাণিজ্যসচিব উইলবার রস
• শক্তিসচিব ড্যান ব্রুলিয়েট
• ভারপ্রাপ্ত চিফ অব স্টাফ মিক মুলভেনি
• জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন
• ফার্স্ট লেডির চিফ অব স্টাফ লিন্ডসে রেনল্ডস
• হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব স্টিফানি গ্রিশাম
• চিফ অব স্টাফের সিনিয়র উপদেষ্টা রবার্ট ব্লেয়ার
... এবং আরও অনেকে
আজ ট্রাম্প কখন কোথায়
• সকাল ১০টা: রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা
• সকাল ১০.৩০: রাজঘাটে গাঁধী সমাধিতে শ্রদ্ধার্পণ
• বেলা ১১টা: হায়দরাবাদ হাউসে মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক
• দুপুর ১২.৪০: চুক্তি সই, মিডিয়া বিবৃতি প্রকাশ
• সন্ধ্যা ৭.৩০: রাষ্ট্রপতি ভবনে ব্যাঙ্কোয়েট
• রাত ১০টা: ফেরার বিমান
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মোতেরা স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানের প্রথমে স্বাগত ভাষণে নরেন্দ্র মোদীও বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের প্রসঙ্গ তোলেন। প্রাদেশিকতার ঊর্ধ্বে ওঠার বার্তা দিয়ে গোড়াতেই বলেন, যে বিরাট সমারোহ এবং উৎসাহ আজ দেখা যাচ্ছে, তা শুধু গুজরাতের নয়। গোটা ভারতের ‘বিবিধতার রঙে রাঙানো’। তাঁর দাবি, ‘‘এই দেশে অসংখ্য ভাষা, পরিধান, খাদ্য, সংস্কার, মতাদর্শ ও সম্প্রদায় রয়েছে। আর এই সমৃদ্ধশালী বৈচিত্রের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে একতা। যা ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের বড় আধারও বটে।’’
আরও পড়ুন: আমেরিকা ভারতের প্রকৃত বন্ধু, ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে বললেন মোদী
এর পর একে অন্যের প্রশংসাতেই বক্তৃতার অর্ধেক শব্দ ব্যয় করলেন মোদী এবং ট্রাম্প। ঘন ঘন আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন। ট্রাম্প জানালেন, নিছক ‘চা-ওয়ালা’ থেকে ‘বিপুল জনাদেশ’ নিয়ে দেশের নেতা হওয়া যে কোনও ভারতবাসীর কাছে উদাহরণস্বরূপ। আবার মোদীর বক্তব্য, ‘‘ট্রাম্প তথা তাঁর পরিবারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নেহাতই একটা (কূটনৈতিক) অংশীদারি নয়। তার চেয়ে অনেক মহৎ এবং ঘনিষ্ঠ।’’
সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতির এই প্রদর্শনীর মধ্যে একটু চোনা অবশ্য পড়ল পাকিস্তান নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যে। সন্ত্রাসবাদ আর উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে বলতে গিয়ে ট্রাম্প বললেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বেশ ভাল। পাকিস্তানের সীমান্তে সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করার প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে আমার প্রশাসন ইতিবাচক ভাবে কাজ করছে।’’ কূটনীতিকদের মতে, পাক-প্রশংসার বিষয়টি হিসেবের মধ্যে ছিল না সরকারের। পাশাপাশি একটা সূত্র এ-ও বলছে যে, কাল রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মোদীর কাছে নাগরিকত্ব বিতর্ক নিয়ে বিশদ জানতে চাইবেন ট্রাম্প। কাশ্মীরে আটক রাজনৈতিক নেতা এবং মানবাধিকার নিয়েও আগ্রহ রয়েছে তাঁর। সন্ধ্যায় দিল্লিতে পা-দেওয়ার আগে হিন্দিতে টুইট করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘সম্প্রীতি’ আর ‘প্রেম’কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিলাষ নিয়েই তিনি ভারতে এসেছেন।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পও শোনালেন চা-ওয়ালার কাহিনি
আজ সাবরমতী আশ্রমে ট্রাম্পকে নিয়ে যেতে মরিয়া ছিল মোদী সরকার। দিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়, গুজরাতে গিয়ে যদি সাবরমতী আশ্রমেই না-যান ট্রাম্প, তা হলে ভুল সঙ্কেত যাবে। শেষ পর্যন্ত ১৫ মিনিটের জন্য সাবরমতী যান ট্রাম্প। কিন্তু স্মারক-খাতায় গাঁধী সম্পর্কে একটি শব্দও লেখেননি। তবে মোতেরার বক্তৃতায় সাবরমতীর উল্লেখ করে ‘লবণ সত্যাগ্রহের’ কথা বলেছেন ট্রাম্প।