প্রেমের সৌধে: তাজমহলের সামনে সস্ত্রীক ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স।
শেষ বিকেলের কনে দেখা আলো তখন তাজের শরীরে।
হাতে হাত ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া এগোচ্ছেন। গাইড নিতিন সিংহ তাঁদের বলছেন, শাহজাহান এই তাজ তৈরি করিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু মৃত্যুর আগে আট বছর আগরা ফোর্টে বন্দি থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকেই যমুনার ও-পারে তাজমহল দেখতেন। বিখ্যাত ‘ডায়না সিট’-এ ইভাঙ্কা তাঁর স্বামীর হাত জড়িয়ে ধরে ছবি তুলছেন। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যদের হাতেই মোবাইল ধরিয়ে দিচ্ছেন ছবি তুলে দেওয়ার জন্য।
সদ্য ‘ইমপিচমেন্ট’ এড়িয়ে আসা ট্রাম্পের কি শাহজাহানের শেষ জীবনের গল্প শুনে শুধুই মন খারাপ হল! না কি নিজের ‘তাজমহল’-এর নস্টালজিয়া ফিরে এল?
আরও পড়ুন: আশ্রমে গাঁধী নয়, লিখলেন মোদীর নাম
নিতিন বোধহয় জানতেন না, ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও একটা ‘তাজমহল’ ছিল। নিউ জার্সির আটলান্টিক সিটিতে সেই ‘ট্রাম্প তাজমহল ক্যাসিনো’ অনেকটা তাজমহলের আদলেই তৈরি হয়েছিল। ক্যাসিনো অবশ্য চলেনি। দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পরে বেশ কয়েক বার হাতবদল শেষে বছর তিনেক আগে তাজমহল ক্যাসিনো যখন নামমাত্র দরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, তখন অবশ্য ট্রাম্পের আর তা নিয়ে ভাবার সময় নেই। কারণ তিনি তত দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মসনদে।
আজ আসল তাজমহলের প্রথম দর্শনের পরেই ভিজিটর্স বুকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘‘তাজমহল সম্ভ্রম জাগায়। ভারতীয় সংস্কৃতির অমূল্য ও বহুমুখী সৌন্দর্যের এ এক অবিনশ্বর নমুনা। ধন্যবাদ ভারত।’’
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল আগরার বিমানবন্দরে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সূর্যাস্তের সোনালি আলোয় তাজ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল শুধুই ট্রাম্প, তাঁর পরিবার ও মার্কিন প্রতিনিধিদলের জন্য। জলের পাশ দিয়ে হাতে হাতে ধরে তাজের দিকে হেঁটেছেন ট্রাম্প দম্পতি। সে সময় তাঁদের গাইডও সঙ্গে ছিলেন না। ইভাঙ্কাদের জন্য ছিলেন আর এক গাইড কমলকান্ত গুপ্ত।
নিতিন জানিয়েছেন, তাজমহলের ভিতরের কারুকার্য দেখে মেলানিয়া জানতে চেয়েছেন, এ সব কি রং করা! এত বড় বড় মার্বেল দিয়ে কী ভাবে এই বিরাট স্মৃতিসৌধ তৈরি হল, তা জেনেও আশ্চর্য হয়েছেন ফার্স্ট লেডি।
শেষবেলায় ডোনাল্ড-ট্রাম্পের সঙ্গে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি পড়েছে পুলিশ থেকে তাজের কর্মীদের মধ্যে। হাসি মুখেই অনুরোধ সামলেছেন তিনি। বিদায় নেওয়ার আগে ট্রাম্প নিতিনকে বলেছেন, বলে যাচ্ছি, আমার সফরের পরে মার্কিন পর্যটকদের ঢল নামবে আগরায়। নিতিন এর আগে ব্রাজিল, ইজরায়েলের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও তাজ দেখিয়েছেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘গাইড’ করা? নিতিনের কথায়, ‘‘এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা।’’