ছন্দপতন: ক্রেন-ভরসায় ফের অস্থায়ী তোরণ উঠছে মোতেরায়। ছবি: পিটিআই।
এক মাস ধরে প্রস্তুতির উত্তেজনা পুইয়েছে এলাকাটা। কাল আমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে মোতেরা স্টেডিয়াম পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোড শো। আর আজই কিনা স্রেফ হাওয়ার ধাক্কায় ভেঙে পড়ল মোতেরা স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি তোরণ!
ড্রোন হামলা আটকানোর ব্যবস্থা আছে। বিমানবন্দর থেকে যে-সড়কপথে মোতেরা স্টেডিয়ামে চলে গিয়েছে, সেই বাইশ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে এনএসজির অ্যান্টি-স্নাইপার টিম। সঙ্গে ১০ হাজার পুলিশ, আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিসের কর্তারা তো আছেনই। আজ অমিত শাহ এসে শেষ মুহূর্তের তদারকি সেরেছেন। তার পরে হাওয়ার তোড়ে এই বেসামাল দশায় তুমুল অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে প্রশাসন। স্টেডিয়ামের আর একটা গেটেরও একাংশ ভেঙেছে। অনেকেই বলাবলি করছেন, ভাগ্যিস, বস্তি ঢেকে ফেলার জন্য বানানো দেওয়ালটা ভেঙে পড়েনি!
ট্রাম্পের কনভয় যাওয়ার রাস্তায় মাঝেমধ্যেই পেল্লায় সাইজের ট্রাম্প এবং মোদীর কাট-আউট। মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর মুখ কিন্তু নেই কোত্থাও। রাস্তার দু’ধারে বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া। প্রেসিডেন্টের কনভয় বেরোনোর ফাঁকেই ওই স্টেজগুলিতে চলতে থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। প্রায় আড়াই দশক আমদাবাদে থাকার সুবাদে বহু আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান অথবা সরকারি শীর্ষ নেতৃত্বের কর্মসূচি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু এ বার নতুন হল, প্রতিটি প্রদেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলিকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পনেরো দিন আগেই বলা হয়েছে যত সম্ভব বেশি সংখ্যায় প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন, অন্ধ্র এবং রাজস্থান অ্যাসোসিয়েশন এই রাজ্যে খুবই সক্রিয়। তারা নিজের নিজের রাজ্যের পোশাক এবং সাংস্কৃতিক পুঁজি নিয়ে উপস্থিত থাকবে রাস্তার ধারে। বাঙালি সংগঠনের পক্ষ থেকে অনল মুখোপাধ্যায় যেমন জানালেন, ‘‘মহিলারা থাকবেন লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে। পুরুষেরা পাঞ্জাবি পরলেই ভাল। সকাল ৯টায় কালীবাড়িতে মিলিত হচ্ছি আমরা। সকাল ১০টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে হবে। তার পরেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের জন্য সাজছে তাজ, চিন্তা বাড়াচ্ছে বাঁদরকুল
মোতেরা স্টেডিয়াম থেকে সাবরমতী আশ্রম ঢাকা পড়েছে বিলবোর্ডে। তাতে ভারত-আমেরিকা মৈত্রীর নানা স্লোগান। চোখ টানল একটি—‘রিয়েল ফ্রেন্ডস ব্রিং রিয়েল স্মাইল, ইয়োর স্মাইল ইজ আওয়ার রিয়েল এস্টেট!’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুবিশাল আবাসন শিল্পের কথা মাথায় রেখেই কি এই হোর্ডিং? কে জানে! সাবরমতী আশ্রম তো বাদই পড়েছিল প্রথমে। তবে আজ দুপুরে সাবরমতী ট্রাস্টের প্রতিনিধি অমৃত মোদী জানালেন, শেষ পর্যন্ত চল্লিশ মিনিটের জন্য সেখানে আসছেন ট্রাম্প দম্পতি। বিষয়টি নিয়ে প্রবল চাপ তৈরি করা হয়েছিল মার্কিন কর্তাদের উপরে। বলা হয়েছিল, নইলে ভুল বার্তা যাবে। তবে সূর্যাস্তের আগেই ট্রাম্প দম্পতিকে তাজমহলে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
কত কী হল এই এক মাসে! যে-সব রাস্তা দীর্ঘদিন ভাঙা ছিল, তার ভোল বদলাল! বস্তির চার পাশে সরকারি টাকায় দেওয়াল উঠল! এখন পাখির চোখ ওই বাইশ কিলোমিটার। বাকি শহরটা যেন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্যান্য মহল্লায় ঘুরলে মনেই হচ্ছে না, কাল কত বড় শো!