ভারতে পাড়ি দেওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সস্ত্রীক ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।
বহুকাঙ্ক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে না। কিন্তু সেই কারণে যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফরটি বিফলে না-যায়, তা নিশ্চিত করতে সক্রিয়তা তুঙ্গে দু’তরফেই। কাল বেলা ১১টা ৪০-এ আমদাবাদে নামবে ট্রাম্পের ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’। প্রথম দিনে কূটনৈতিক সৌজন্য ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান চলবে আমদাবাদ থেকে আগরায়। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার দিল্লিতে শীর্ষ বৈঠক এবং বিভিন্ন চুক্তি সই। লক্ষ্য, দু’দেশের কৌশলগত সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করা। বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য-চুক্তি না-হলেও বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বোঝাপড়া-লেনদেন বাড়ানোয় জোর দেবে দুই দেশই।
ভারত রওনা হওয়ার আগে ট্রাম্প আজ বলেছেন, ‘‘ভারতবাসীর সঙ্গে দেখা করতে মুখিয়ে আছি। লক্ষ লক্ষ লোক থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী আমার বন্ধু। তিনিই বলেছেন, এত বড় আয়োজন আগে কখনও হয়নি।’’ ট্রাম্প-কন্যা ইভাঙ্কা দু’বছর আগে হায়দরাবাদে মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চে এসেছিলেন। টুইটারে সেই স্মৃতিচারণ করে ইভাঙ্কা লেখেন, ভারতে ফের আসতে পেরে তিনি সম্মানিত।
ভূ-কৌশলগত ভাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বৈঠক হবে ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদীর। তাঁর সফরে আমেরিকার যে লাভ হয়েছে, তা প্রমাণের ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ট্রাম্পের। সামনেই নির্বাচন। কাল মোতেরা স্টেডিয়ামের জনসভার বক্তৃতায় নিজের দেশের ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সদর্থক বার্তা দিতে চান ট্রাম্প। এরই পাশাপাশি হার্লে ডেভিডসন মোটরবাইকের উপরে ভারতীয় শুল্ক কমিয়ে তিনি যদি ফিরতে পারেন, সেটাও মার্কিন জনতা এবং সে-দেশের সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের কাছে বুক ঠুকে বলার মতো বিষয় হবে। কারণ ভারতের চড়া শুল্কের হার নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ জানিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আজ কখন কোথায় ট্রাম্প
• সকাল ১১.৪০: আমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দরে পৌঁছবেন।
• দুপুর ১২.১৫: যাবেন সাবরমতী আশ্রমে।
• দুপুর ১.০৫: হাজির হবেন মোতেরা স্টেডিয়ামে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে।
• দুপুর ৩.৩০: আগরার উদ্দেশে রওনা।
• বিকেল ৫.১৫: তাজ-দর্শন।
• বিকেল ৫.৪৫: দিল্লি পাড়ি।
• সন্ধ্যা ৭.৩০: নামবেন পালাম বায়ুসেনা ঘাঁটিতে।
ভারত হাতে-কলমে কী পেতে পারে, তা স্পষ্ট হবে পরশু। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, পরমাণু চুক্তির রূপায়ণে দু’দেশের সংস্থার মধ্যে চুক্তিপত্র সই, মহাকাশ গবেষণা নিয়ে সহযোগিতা বাড়ানো, সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সমঝোতা গভীর করা, ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে মার্কিন সংস্থার সহায়তায় প্রাকৃতিক গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার মতো বিষয়গুলি নয়াদিল্লির লাভের ঘরে থাকবে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের জন্য সাজছে তাজ, চিন্তা বাড়াচ্ছে বাঁদরকুল
ভারতের কৌশলগত আগ্রহ যে-দু’টি বিষয়ে সব চেয়ে বেশি তা হল, আফগানিস্তান সম্পর্কে মার্কিন মনোভাব বিশদ ভাবে জানা এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্য কমাতে আমেরিকার সহযোগিতা। দ্বিতীয়টিতে আমেরিকা যথেষ্ট আগ্রহী। হোয়াইট হাউস আগেই বলেছে, ওই অঞ্চলে অবাধ ও মুক্ত বাণিজ্যপথ গড়ে তোলার জন্য ভারতকে প্রধান স্তম্ভ বলে মনে করে তারা। চিনের সঙ্গে বাণিজ্য-যুদ্ধে অবতীর্ণ আমেরিকা স্বাভাবিক ভাবেই এ ক্ষেত্রে ভারতকে পাশে চায়। তবে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি ও পাকিস্তান প্রসঙ্গে ট্রাম্প কী অবস্থান নেন, যৌথ বিবৃতিতে এ ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেন কি না— সে-দিকেও তাকিয়ে রয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। কেন্দ্র চায়, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস রুখতে পাকিস্তানের ভূমিকার নিন্দা করুন ট্রাম্প। সেই বিষয়টিও বিবৃতিতে আনার চেষ্টা করা হবে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং ভারতের নিরাপত্তায় তার আঁচ কী ভাবে রোখা যাবে, তা নিয়েও ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলবেন মোদী। তবে ট্রাম্প ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ নিয়ে বক্তৃতা দিতে পারেন জেনে চাপেও রয়েছে দিল্লি।
দিল্লির একটি সরকারি স্কুলের ‘হ্যাপিনেস ক্লাস’-এ ট্রাম্প-পত্নী মেলানিয়া যাবেন বলে ঠিক থাকলেও অরবিন্দ কেজরীবাল এবং মণীশ সিসৌদিয়া সেখানে আমন্ত্রণ পাননি। আজ এই প্রসঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি ছিল না।’’