ফাইল চিত্র।
মেলালেন, ট্রাম্প মেলালেন।
মেলালেন ‘বৈষ্ণবজনতো’ আর ‘জেলহাউস রক’। মেলালেন ডান্ডি অভিযান আর ‘রক অ্যান্ড রোল’। খাটো ধুতি আর লাঠির সঙ্গে মেলালেন দশলাখি সুট। ‘মিত্রোঁ’র সঙ্গে মেলালেন ‘মার্গারিটা’।
মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী আর এলভিস প্রেসলি, দুই নাম এসে মিলে গেল শেষে— একটি নামে। নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কাল জোর গলায় বলেছেন, তাঁর চোখে মোদীই ‘ভারতের জনক’। আর মোদীই ‘এলভিসের ভারতীয় সংস্করণ’। মুখ ফস্কে অবশ্য ‘মার্কিন সংস্করণ’ বলে ফেলেছেন ট্রাম্প। তবে বক্তব্য সুস্পষ্ট।
মোদীকে ‘জাতির জনক’ বলার কপিরাইট অবশ্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের স্ত্রী অমৃতার। গত ১৭ তারিখে মোদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে তাঁকে গাঁধীর সঙ্গে একাসনে বসিয়ে দেন অমৃতা। আর গত কাল মোদীকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একই সঙ্গে ‘ভারতের জনক’ আর ‘রক অ্যান্ড রোলের রাজা’-কে দেখতে পান তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘‘ভারতে আগে অনেক লড়াই, মতবিরোধ ছিল। তিনি (মোদী) বাবার মতো সবাইকে এক করলেন। আমাদের ওঁকে ভারতের জনক বলা উচিত। আমি তো দেখলাম, লোকে ওঁকে কত ভালবাসে। তারা পাগল হয়ে যাচ্ছিল। ইনি তো এলভিসের মতো।’’
কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’-র মঞ্চে উঠে মোদী-ভক্তদের গর্জন শুনে এলভিস-উন্মাদনার কথা হয়তো মনে পড়েছে ট্রাম্পের। কিন্তু গাঁধীর উপাধি ‘জাতির জনক’ আর ট্রাম্পের বলা ‘ভারতের জনক’— দু’টো হয়তো এক নয়। যদিও নেটিজ়েনরা সবাই এই যুক্তি মানেননি। তাঁরা কেউ টাকার ছবিতে গাঁধীর জায়গায় মোদীর মুখ বসিয়ে টুইট করেছেন, কেউ ফটোশপে গাঁধীর ছবিতে জুড়েছেন মোদীর চাপদাড়ি।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ অবশ্য বলে দিয়েছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে যাঁরা গর্ববোধ করছেন না, তাঁদের নিজেদের ভারতীয় বলাই উচিত নয়! জিতেন্দ্রর বক্তব্য, ‘‘শুধু কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে নয়, এই প্রথম কোনও রাষ্ট্রনেতাকে নিয়ে এমন কথা বললেন এক জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কংগ্রেসের তা নিয়ে সমস্যা থাকলে তারা ট্রাম্পের সঙ্গে তর্ক করুক।’’ যার উত্তরে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘আমি অবশ্যই গর্বিত নই। এটা গাঁধীর প্রতি অপমান। আমার বন্ধু জিতেন্দ্র সিংহ এই যুক্তি দেখিয়েই আমায় ভারত থেকে বার করে দেবেন তো?’’
এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এক ধাপ এগিয়ে ট্রাম্পকে ‘অশিক্ষিত’ বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে ট্রাম্পের কোনও ধারণাই নেই। গাঁধীর সঙ্গে মোদীর তুলনা চলে না। নেহরু বা সর্দার পটেলের মতো নেতাও ‘জাতির জনক’ উপাধি পাননি। আশা করব, প্রধানমন্ত্রীই এর ব্যাখ্যা দেবেন।’’ তবে মোদীকে ‘এলভিস’ বলা নিয়ে ওয়াইসির মত, ‘‘এলভিস গানে মন্ত্রমুগ্ধ করতেন, মোদী করেন বক্তৃতায়। তা-ও আমি প্রধানমন্ত্রীকে এ ভাবে ছোট করতে চাই না।’’
রসিক বাঙালি অবশ্য অঞ্জন দত্তের ‘মেরি অ্যান’ গাইছে। শুধু ‘মাথার ভেতর ছিল এলভিস প্রেসলি’— এইখানটা একটু পাল্টে দিয়ে।
কী পাল্টে কী হয়েছে, বলা নিষ্প্রয়োজন।