প্রতীকী ছবি।
বাজি নিয়ে রাজনীতির বাজার গরম!
দিল্লি থেকে রাজস্থান, হরিয়ানা থেকে ওড়িশা— কোভিড এবং বায়ুদূষণের কথা মাথায় রেখে দীপাবলিতে একের পর এক রাজ্য বাজি নিষিদ্ধ করেছে। তা নিয়েই এ বার রাজনীতির দাবা খেলায় একই মেরুতে কংগ্রেস, ডিএমকে, সঙ্ঘপরিবার।
গোটা দেশে বাজির বড় অংশ তৈরি হয় তামিলনাড়ুর শিবকাশীতে। রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার প্রথম বাজি নিষিদ্ধ করে। তা নিয়ে ডিএমকে নেতা টি আর বালু মোদী সরকারের শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ারকে চিঠি লিখে প্রশ্ন তুলেছেন, রাজস্থান সরকার বাজির উপরে আচমকা নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তামিলনাড়ুর বাজি কারখানার শ্রমিকদের কী হবে? এ-ও জানিয়েছেন, ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনের নির্দেশেই তিনি চিঠি লিখছেন।
জাতীয় রাজনীতিতে এবং তামিলনাড়ুতেও ডিএমকে, কংগ্রেস জোটসঙ্গী। ডিএমকে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পিছিয়ে নেই কংগ্রেস নেতারাও। জাতীয় পরিবেশ আদালত গোটা নভেম্বর মাসেই বাজি নিষিদ্ধ করা নিয়ে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়েছে। রাহুল গাঁধীর আস্থাভাজন কংগ্রেস সাংসদ মাণিকম টেগোর কেন্দ্রের পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকেও চিঠি লিখেছেন। তাঁর যুক্তি, দু’বছর আগেই সিএসআইআর-এনইইআরআই-এর সুপারিশ মেনে পরিবেশ-বান্ধব বাজি তৈরি শুরু হয়েছে। শিবকাশীর ৭৮০ ছোট ও মাঝারি কারখানায় প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ কাজ করেন। তাঁরা সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই দীপাবলির জন্য বাজি তৈরি করেছেন। মাণিকমের আর্জি, কেন্দ্রীয় সরকার যেন শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে জাতীয় পরিবেশ আদালতে অবস্থান নেয়।
ডিএমকে, কংগ্রেসের মতো একই মত আরএসএসের সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চেরও। মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজনও আজ বাজিতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন। তাঁর যুক্তি, কোনও রকম তথ্য ছাড়াই বিভিন্ন রাজ্যের সরকার বাজি নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চিনা বাজিতে পটাসিয়াম নাইট্রেট ও সালফার মেশালে দূষণ হয়। কিন্তু পরিবেশ-বান্ধব বাজিতে এ সব মেশানো হয় না। অ্যালুমিনিয়াম, লিথিয়াম, আর্সেনিক, পারদও কম থাকে।
দিল্লির এমস-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া আজও সাবধান করেছেন, কোভিড-১৯ এমনিতেই ফুসফুসে হানা দেয়। দিল্লির মতো শহরে বায়ুদূষণের ফলে এমনিতেই ফুসফুসের ক্ষতি হয়। তার সঙ্গে বাজি পোড়ালে বায়ু দূষণের মাত্রা আরও বাড়বে। ফুসফুসে আরও সমস্যা হবে। ফলে কোভিড-১৯-এর ধাক্কাও বেশি লাগবে।
কিন্তু দূষণ কমাতে গিয়ে আখেরে সেই শ্রমিক থেকে কৃষকদের উপরেই কোপ এসে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজির উপরে নিষেধাজ্ঞায় শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন। দিল্লির দূষণ কমাতে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানায় খড় পোড়ানো বন্ধ করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার খড় পোড়ানোর জন্য চাষিদের জেলে পুরেছে। মায়াবতী আজ তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কৃষক সংগঠনগুলির প্রশ্ন, চাষিরা খরচ বাঁচাতে খড় পুড়িয়ে দেন। খড় না পোড়াতে দিলে তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে!