—ফাইল চিত্র।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে চলছে রাজস্থান সরকার। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত আজ জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁর সরকার আইন আনবে। তাঁর দাবি, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশে রাজস্থানই প্রথম মাস্ক নিয়ে আইন আনতে চলেছে। একই সঙ্গে গহলৌত জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যের কথা মনে রেখে এ বার আতসবাজি বিক্রি এবং পোড়ানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে সরকার। আগামী ৭ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাজি পোড়ানো বন্ধ রাখা যায় কিনা, তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক এবং চারটি রাজ্য সরকারের কাছে নোটিস পাঠিয়েছে জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল (এনজিটি)।
করোনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একাংশের মতে, কোভিড-১৯ মূলত শ্বাসতন্ত্রের অসুখ। ফুসফুসের রক্তবাহী নালীতে রক্ত জমাট বেঁধে সমস্যা তৈরির পাশাপাশি, ‘পোস্ট কোভিড ফ্রাইব্রোসিস’ও রয়েছে। এই ধরনের রোগীরা কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও বহু দিন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন। দীপাবলির সময় বাজি পোড়ানো ওই সব রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে বলে মত দেশের বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের।
এই পরিস্থিতিতে গহলৌত আজ জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন বাঁচানোই সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁর টুইট, ‘‘বাজির দূষিত ধোঁয়া থেকে করোনা-আক্রান্তদের ও আমজনতাকে রক্ষা করতে বাজি বিক্রি এবং তা পোড়ানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।’’ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের দাবি, দেশের অন্য রাজ্যগুলিতেও বাজি বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক।
আরও পড়ুন: ভোটের বিহারে আজ দ্বৈরথে মোদী-রাহুল
রাজস্থানে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা দু’লক্ষের কাছাকাছি। মৃতের সংখ্যাও দু’হাজার ছুঁইছুঁই। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গত কালই রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন গহলৌত। সংক্রমণে লাগাম টানতে কী কী পদক্ষেপ করা দরকার ও আগামী দিনে কী পরিকল্পনা করা হবে তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’ এবং ‘শুদ্ধ কে লিয়ে যুদ্ধ’-এর প্রচার করছে সরকার। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কথা মাথায় রেখে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না রাজ্য প্রশাসন। কোভিড প্রোটোকলে মাস্ক পরার বিষয়টি থাকলেও এ বার আইন আনতে চলেছে গহলৌত সরকার। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাস্কই প্রতিষেধক।’’
বাজি নিষিদ্ধ করায় দুশ্চিন্তায় বাজি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি ও বাজি তৈরির শ্রমিকেরা। রাজস্থানের ঢোলপুরের এক শ্রমিক বলেন, ‘‘গত ছ’মাস ধরে আমাদের কোনও রোজগার নেই। দীপাবলিতে রোজগার হবে ভেবেছিলাম। ধার করে বাজি তৈরি করেছি, এ বার টাকা শোধ দেবো কী ভাবে!’’
গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণ কমছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনের সংক্রমণ ৫০ হাজারের নীচে। দৈনিক মৃত্যুও পাঁচশোর আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। ইতিমধ্যেই আক্রান্তদের সুস্থ হওয়া ৯১ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদী-চিনফিং তিন বার দেখা হবে নভেম্বরেই
টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এর গবেষকেরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, মুম্বইয়ে দেশের মধ্যে প্রথম ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে চলেছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হবেন মুম্বইয়ের বস্তি এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষ। মুম্বইয়ের বস্তি এলাকার বাইরের ৫৫ শতাংশ মানুষ কোভিড-আক্রান্ত হতে পারেন। গবেষণাটির দাবি, মুম্বইতে করোনার ধার কমেছে। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে সেখানে অতিমারি যতটা প্রাণঘাতী ছিল, এখন ততটা নয়। গণপতি উৎসবের সময় সংক্রমণের গ্রাফ অনেকটা বেড়েছিল। দীপাবলির দু’এক সপ্তাহ পরে সংক্রমণ ফের খানিকটা বাড়বে।
দিল্লিতে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভল্লা। রাজধানীতে বাড়তে থাকা বায়ুদূষণ ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। পরিস্থিতি মোকাবিলা করা নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা এতটাই বাড়ছে যে, প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালগুলির আইসিইউয়ে ভেন্টিলেটর-সহ বেড পাওয়া যাচ্ছে না।