বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র।
বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ ঘিরে ক্রমশ চাপ বাড়ছে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের উপর।
উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কে এম জোসেফকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ নিয়ে কলেজিয়ামের সুপারিশে আপত্তি তুলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর এতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ বিচারপতিরা অনেকে ক্ষুব্ধ বলে আদালত সূত্রের বক্তব্য। অনেক বিচারপতিই চাইছেন, এ বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান প্রধান বিচারপতি। দ্রুত কলেজিয়ামের বৈঠক ডেকে বিচারপতি জোসেফের নাম ফের সুপারিশ করা হোক।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ বিচারপতিরা সরাসরি মুখ না খুললেও তাঁদের মনের কথাই যেন প্রতিফলিত হয়েছে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার মুখে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতায় আঘাত করেছে। যদি বিচারপতি জোসেফের নাম ফের সুপারিশ করতে হয়, তা হলে দেরি না করে এখনই তা করা উচিত।’’ আর এক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মোদী সরকারের পদক্ষেপকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এক নজরে বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র
• বয়স ৬১ বছর
• প্রথম মহিলা আইনজীবী, যিনি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হলেন
• ‘সিনিয়র অ্যাডভোকেট’-এর মর্যাদাপ্রাপ্ত দ্বিতীয় মহিলা
• মানবাধিকার ও আর্বিট্রেশন সংক্রান্ত মামলায় বিশেষজ্ঞ
• কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা রুখতে ‘বিশাখা নির্দেশিকা’ কমিটির সদস্য
• সুপ্রিম কোর্টে যৌন হেনস্থার অভিযোগ বিচার কমিটির সদস্য
• লেডি শ্রীরাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি
ইতিহাসে
• সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে মাত্র ছ’জন মহিলা বিচারপতি
• বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতি এক জনই— আর ভানুমতী
বিভিন্ন মামলা নিয়ে মোদী সরকার প্রধান বিচারপতির উপরে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ প্রবীণ বিচারপতিদের। বিচারপতি জোসেফের নাম ফেরত পাঠানো নিয়ে সব স্তরে আপত্তি উঠলেও গত কাল প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, কেন্দ্রীয় সরকার নিজের অধিকারের মধ্যে থেকেই আপত্তি তুলেছে।
এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। আইন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এ পি শাহর প্রশ্ন, ‘‘এজলাসে এই মন্তব্যের আগে প্রধান বিচারপতি কি কলেজিয়ামের বাকি দুই সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন?’’ এ কথা শুনে তিনি হতভম্ব বলেও মন্তব্য করেছেন শাহ।
এই অশান্তির আবহেই আজ নতুন বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন ইন্দু মলহোত্র। প্রথম দিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেও বসেছেন তিনি। কিন্তু নতুন বিচারপতির উপস্থিতিতেও পরিবেশ হালকা হয়নি।
রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর মামলাগুলির ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নিজের বাছাই করা বিচারপতিদের নিয়ে বেঞ্চ ঠিক করছেন বলে সরব হয়েছিলেন ‘বিদ্রোহী’ বিচারপতিরা। সেই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলছিলেন, তিনিই ‘মাস্টার অফ দ্য রোস্টার’। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন প্রবীণ আইনজীবী শান্তি ভূষণ।
আজ মোদী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির পাশে দাঁড়িয়ে জানান, এক জনের বদলে একাধিক বিচারপতির কলেজিয়ামকে রুটিন ঠিক করতে দিলে ‘বিবাদ ও বিশৃঙ্খলা’ তৈরি হবে। ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে। শান্তি ভূষণের আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভের পাল্টা বক্তব্য, স্পর্শকাতর মামলা প্রধান বিচারপতির ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে ছাড়া যাবে না। এই মামলার রায় পরে ঘোষণা হবে।