হাতে-হাতে কিংবা অনলাইনে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-তে নাম তোলার জন্য কাছাড়ে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের একাংশ এখনও নাগরিকত্বের কোনও নথিপত্র দেখাননি। আজ এই তথ্য জানিয়েছেন জেলার প্রোজেক্ট সুপারভাইজর দীপেন দৈমারি।
তিনি বলেন, কয়েক দফায় সময়সীমা বাড়ানোর পরেও নথিপত্র দেখানোর শেষ তারিখ কবে পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও অনেকে যোগাযোগ করেননি। বেশ কিছু আবেদনকারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যে ঠিকানা দেখিয়ে তাঁরা আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন, সেখানে গেলে জানা যাচ্ছে, কেউ রয়েছেন আমেরিকায়, কেউ বা লন্ডনে।
এনআরসি-তে নাম তুলতে আগ্রহী, কিন্তু নথিপত্র দেখাতে না পারা লোকের সংখ্যাটি একেবারে মন্দ নয়। শুধুমাত্র উধারবন্দ রেভেন্যু সার্কেলে একশো শতাংশ আবেদনকারীর নথিপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। শতাংশের হিসেবে আবেদনপত্র পরীক্ষা সবচেয়ে বেশি বাকি সোনাইয়ে। সেখানে ৯৫ শতাংশ আবেদনকারী ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখিয়েছেন। শিলচরে তা ৯৬, কাটিগড়ায় ৯৮ ও লক্ষ্মীপুরে ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সংখ্যার হিসেবে, এখনও শিলচরের ৬ হাজার ২৮২, সোনাইয়ে ৪ হাজার ৭৫৮, কাটিগড়ায় ১ হাজার ৫৫৬ ও লক্ষ্মীপুরে ২৮৬ জনের আবেদন এমনি পড়ে রয়েছে। আবেদনকারীরা নথি দেখাননি।
এনআরসি-র ভারপ্রাপ্ত এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রাণী লস্কর জানান, আবেদনকারীদের একাংশ অনলাইনে আবেদন জানিয়েই দায়িত্ব শেষ বলে মনে করছেন। কবে কোথায় নথিপত্র নিয়ে যেতে হবে, সে সবের খবরও রাখেন না। ফ্যামিলি ট্রি বা বংশলতিকা জানানোর নির্দেশ পালনেরও ধার ধারেন না।
তাঁদের জন্য শেষপর্যন্ত অনলাইনেই বংশলতিকা জমা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর পরও বাকি অনেকের। তবে যাঁরা সেবাকেন্দ্রে গিয়ে বংশলতিকা জমা করেছেন, তাঁদের আর অনলাইনে জমা করার প্রয়োজন নেই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইন্দ্রাণীদেবী।
অন-লাইন কি অফ-লাইনে, এতজনের নথিপত্র পরীক্ষা বাকি থাকার বিষয়টি যে জেলা প্রশাসনকে উদ্বেগে রেখেছে, তা স্বীকার করেন তিনি। ইন্দ্রাণীদেবী জানান, এখনও নিজ নিজ এলআরসিআর-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে নথিপত্র পরীক্ষা করানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাইছি, যাঁরা আবেদনপত্র জমা করেছেন, তাঁদের কারও নথিপরীক্ষা যেন বাকি না থাকে।’’
নথিপত্র পরীক্ষা করাতে গিয়ে অনেকে আবার জাল নথিও জমা করেছেন। দীপেনবাবু বলেন, ‘‘বেশ কিছু জন্মের শংসাপত্র জাল। যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য সমস্ত নথিপত্র সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়টিও রাজ্য এনআরসি কর্তৃপক্ষের নজরে হচ্ছে। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’’
এনআরসি-র কাজকর্ম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসন সব ধরনের চেষ্টা করে চালালেও ইন্টারনেট কানেকশন তাঁদের বেশ ভোগাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন দীপনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘লাইন পাওয়াই কঠিন। ক’দিন থেকে সমস্যা আরও বেড়েছে। ইন্দ্রাণীদেবীর দাবি, ‘‘এই সমস্যা সমাধানেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’