টাকা নয়, প্লাস্টিক চাই, তবেই পড়া যাবে এই স্কুলে। এই আদর্শ নিয়েই তৈরি হয়েছে অসমের পামোহী-তে 'অক্ষর ফোরাম'।
২০১৫-১৬ সালে এই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। পথটা সহজ ছিল না মাজিন মুখতার এবং পারমিতা শর্মার জন্য। অনেক বাধা-ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে এই স্কুল তাঁরা তৈরি করেছেন।
মাজিন নিউইয়র্কের বাসিন্দা। ২০১৫-তে ভারতে আসেন। তারপর পারমিতার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। দু’জনে মিলে একটি স্বপ্ন দেখেন আর তারই ফল হল আজকের এই প্রতিষ্ঠান।
‘অক্ষর’-এর পথ চলা শুরু হয়েছিল ২০ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে। বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় ১০০। এদের বেশির ভাগই ৪ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
বাঁশের তৈরি একে বারে অন্য রকমের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘অক্ষর’। এখানে পড়তে গেলে টাকা নয়, স্কুল-ফি হিসেবে দিতে হবে বর্জিত প্লাস্টিক।
আজকের যুগে দাঁড়িয়ে যেখানে প্রাইভেট স্কুলগুলোর মাইনে নিয়ে বাবা-মা চিন্তিত থাকেন, সেখানে এই প্রতিষ্ঠান একেবারে অন্য ধাঁচের। এখানে ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি থেকে বর্জিত প্লাস্টিক বয়ে নিয়ে যায় স্কুলে।
সপ্তাহে এক বা দু’দিন পড়ুয়ারা তাদের বাড়িতে পড়ে থাকা প্লাস্টিক যেমন বোতল, চিপসের প্যাকেট, যে কোনও খাবারের প্লাস্টিক স্কুলে নিয়ে আসে। সপ্তাহে অন্তত ২৫টি করে প্লাস্টিক তাঁরা একটা জায়গায় জড়ো করে।
বর্জিত প্লাস্টিক বোতলের ভিতর প্লাস্টিকের প্যাকেট ঢুকিয়ে তাঁরা 'ইকো ব্রিকস' তৈরি করে। স্কুল সাজাতে ব্যবহার করা হয় এই 'ইকো ব্রিকস'।
পারমিতার মতে, “অনেকেই প্রথমে স্কুলে আসতে চায়নি। দারিদ্রতার জন্য মাঝ পথে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল তারা। পরিবারের পাশে থাকবে বলে পড়াশোনা ছেড়ে বেছে নিয়েছিল রোজগারের রাস্তা। সেখান থেকে তাদের স্কুলে ফেরত আনাটা ছিল প্রথম চ্যালেঞ্জ।”
এই স্কুলে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়ায়। এর মাধ্যমে তারা কিছু উপার্জনও করতে পারছে। অর্থাভাবে স্কুলছুট হতে হচ্ছে না।
এখানে সার্টিফিকেট-এর ব্যবস্থা রয়েছে। 'ন্যাশনাল স্কুল অভ ওপেন স্কুলিং' এর থেকে তাঁরা সার্টিফিকেট পাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে অনেক সংস্থা রয়েছে যারা অক্ষরের জন্য টাকা ডোনেট করে। এছাড়াও সাধারণ মানুষ এখানে ডোনেট করতে পারেন। ২০১৮-তে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড শিক্ষার্থীদের জন্য টাকা ডোনেট করেছিল।
মাজিনের মতে, অক্ষর বিভিন্ন ধরনের অভিযান করে। গাছ লাগান থেকে শুরু করে কিছু রাস্তার কুকুরকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব রয়েছে অক্ষরের শিক্ষার্থীদের উপর।
প্লাস্টিক দূষণের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বেখেয়ালে যত্র-তত্র প্লাস্টিক ফেলে দিই। এই করে যে আমাদেরই ভবিষ্যত্ প্রশ্নের মুখে, তা নজর করি না। শুধু আমাদের নয়, পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক।
এখানে কর্মরত এবং শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতা গড়ে উঠেছে তাদের পরিবারের মধ্যেও। অসম ছাড়িয়ে এ বার দেশের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়তে চাইছে অক্ষর। তাদের এই প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই সুনাম পেয়েছে।