Fuel Price

Fuel Price Hike: দাম বৃদ্ধির দৌড় জারি, রাজ্যে ফের ‘সেঞ্চুরি’ ডিজেলের, কলকাতায় ১১৫ পার পেট্রলও

আগুন খাদ্যপণ্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার যখন সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে, তখন সরকার দেখাচ্ছে ভারতে কত ‘কম’ বেড়েছে দাম।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৪
Share:

ডিজেল ১০০। কোচবিহারের একটি পাম্পে। —নিজস্ব চিত্র।

পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর পর থেকে ফের নাগাড়ে দাম বৃদ্ধির দৌড় শুরু হয়েছে তেলের। সেই সূত্রে রাজ্যে আরও একবার ‘সেঞ্চুরি’ করল ডিজ়েল। গত বছর জুলাইয়ের পরে মঙ্গলবার ফের উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের একাংশে লিটার পিছু ১০০ টাকা পেরিয়ে গেল এই পরিবহণ জ্বালানি। যা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল গোটা রাজ্যে। আজ, বুধবার আরও চড়েছে তেলের দাম। ফলে পশ্চিমবঙ্গে ডিজ়েলে ‘সেঞ্চুরি’-র তালিকা তো লম্বা হয়েইছে, সেই সঙ্গে উৎকণ্ঠার প্রহর গুনতে শুরু করেছে কলকাতাও। এখানে আইওসি-র পাম্পে লিটারে ৮১ পয়সা বেড়ে ডিজ়েল বিক্রি হচ্ছে ৯৯.৮৩ টাকায়। ৮৪ পয়সা বেড়ে পেট্রল পেরিয়ে গিয়েছে ১১৫ টাকা। এক লিটার মিলছে ১১৫.১২ টাকা। এখনও পর্যন্ত এটাই তার সর্বোচ্চ দর।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এই দফায় দাম বৃদ্ধির গতিও কার্যত নজিরবিহীন। মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে (২২ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল) কলকাতায় পেট্রল বেড়েছে মোট ১০.৪৫ টাকা, ডিজ়েল ১০.০৪ টাকা। লাগাতার বাড়তে থাকা জ্বালানির জেরে আগুন খাদ্যপণ্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার যখন সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে, তখন সরকার দেখাচ্ছে ভারতে কত ‘কম’ বেড়েছে দাম। মঙ্গলবার লোকসভায় বিরোধীদের ক্ষোভের মুখে ফের কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীর দাবি, ‘‘আমরাই একমাত্র দেশ নই যাদের উপর যুদ্ধের (রাশিয়া-ইউক্রেন) প্রভাব পড়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানি, শ্রীলঙ্কার মতো দেশে পেট্রলের দাম ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ভারতে বেড়েছে মাত্র ৫%।’’

পণ্য ও যাত্রী পরিবহণের প্রধান জ্বালানি ডিজ়েলের দাম লাগামছাড়া ভাবে বাড়তে থাকার কারণেই মূলত আশঙ্কার চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। যেমন, পেঁয়াজ থেকে অন্ধ্রের মাছ কিংবা যে সব পণ্য বাইরে থেকে এ রাজ্যে আসে, সেগুলির জন্য বাড়তি মাসুল গুনতে হতে পারে। আবার এ বছরে দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে আলুর ফলন ভাল হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের পাশাপাশি ডিজ়েলের দাম লিটার প্রতি ১০০ টাকা ছাড়িয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া, ঝালদা, মুর্শিদাবাদের ডোমকলেও। দার্জিলিং, মেদিনীপুরের তিন জেলায়, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূমের বিভিন্ন এলাকায় ছিল একশোর দোরগোড়ায়। বুধবার তা পেরিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি কলকাতায় আলু আনার গাড়ি-ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে। জলপাইগুড়িতে এরই মধ্যে আলু নিয়ে হিমঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলি বাড়তি ভাড়া চাইতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ধান চাষের জলের জন্য পাম্পেও ডিজ়েল জরুরি। সেই সঙ্গে যাতায়াতের বাড়তি গাড়ি ভাড়া চাওয়ার ঝোঁক বেড়েছেই। পেট্রল পাম্পের মালিক থেকে শুরু করে বাসমালিক সমিতি— সকলেরই এখন দাবি, জিএসটি চালু হোক পেট্রল-ডিজ়েলেও।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, দুধ থেকে আনাজ, মাছ, মাংস— সব কিছুর কিনতে খরচ বাড়ছে। তার উপরে রান্নার গ্যাস হাজার টাকা। ওষুধ কেনার জন্যও টাকা লাগছে বেশি। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ রোজগেরে মানুষের। বিশেষত, দীর্ঘ করোনাকাল যেখানে বহু মানুষের রুজি কেড়েছে। অনেকের কমিয়েছে বেতন। দেশে বেকারত্বের হার এখনও আঁতকে ওঠার মতো। কোভিডের সংক্রমণ প্রধান রোজগেরে মানুষটিকে কেড়ে নিয়ে পথেও বসিয়েছে অসংখ্য পরিবারকে। ফলে রোজগারের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠার আগেই মূলত মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের আয়ের থেকে ব্যয় বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। ভোগান্তি কোথায় থামবে, সেই প্রশ্নের উত্তর হাতড়াচ্ছেন দেশবাসী। এমন এক সময় সুরাহা দেওয়ার বদলে, দাম বৃদ্ধির গতি নিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্যে কিছুটা হতবাক আমজনতা। ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। বিশেষত চড়া উৎপাদন শুল্কের প্রশ্নে। যা গত নভেম্বরে সামান্য কমেছিল (পেট্রলে লিটারে ৫ টাকা, ডিজ়েলে ১০ টাকা)। হালে আর উচ্চবাচ্য করছে না সরকার।

মঙ্গলবার সংসদে ফের তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন বিরোধীরা। রাজ্যসভার অধিবেশন দু’বার মুলতুবিও হয়ে যায়। সরকার আঙুল তুলেছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়া দর ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে। তবে বিরোধীদের বিক্ষোভ বহাল। তাদের দাবি, এ বার অন্তত আমজনতাকে সামান্য স্বস্তি দিতে শুল্কের বোঝা কমাক কেন্দ্র। উল্টো দিকে, কেন্দ্রের বক্তব্য, দাম কমাতে নিজেদের ভাগ থেকে কর কমানোর পথে হাঁটুক রাজ্যগুলি। রাজ্যসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় তেল, ওযুধ-সহ নানা ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার আবেদন জানালেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম বেঙ্কাইয়া নায়ডু তা গ্রহণ করেননি। তাঁর যুক্তি, অর্থবিল ও অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিলের আলোচনার সময়ে কিছু সদস্য এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। সুখেন্দুশেখর সে কথা মানলেও জানান, বিরোধীরা এ নিয়ে সুসংহত আলোচনা চান। সংসদে বলার সুযোগ না পেলে তাঁরা কোথায় বলবেন, প্রশ্ন তোলেন খড়্গে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement