শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র।
সিএএ-এনআরসি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছেই। তার পরে ভিসা সংক্রান্ত জরিমানার ক্ষেত্রে প্রবল বৈষম্য নিয়েও অসন্তোষ বেড়েছে বাংলাদেশে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন ঢাকা সফরে সেই বিষয়টিও তুলবেন বাংলাদেশ নেতৃত্ব।
এক বছর আগেই ভিসা নীতি নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের নাগরিক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈনের মতো সংখ্যালঘুরা ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও ভারতে থাকলে, তাদের জন্য নামমাত্র জরিমানা ধার্য করা হয়। তুলনায় ওই তিন দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় মুসলমানদের একই কারণে দু’শোগুনেরও বেশি জরিমানা নির্ধারিত হয়েছে।
গোড়াতেই দিল্লির এই সিদ্ধান্তকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। বিষয়টি আরও বেশি নজরে আসে গত নভেম্বরে ইডেনে ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচের সময়। ওই ম্যাচ দেখতে আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সে দেশের ক্রিকেটার সইফ হাসান তাঁর ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি দিন থেকে গিয়েছিলেন ভারতে। আগে থেকেই ছ’মাসের ভিসা ছিল তাঁর কাছে। সূত্রে জানা যায়, তিনি বিষয়টি প্রথমে খেয়াল করেননি। পরে বুঝতে পেরে কলকাতায় তিনি বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশন দফতরে কথা বলেন এ বিষয়ে। তাঁকে ২১ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। সে সময় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান জানিয়েছিলেন, ‘‘বিমানবন্দরে পৌঁছে হাসান বুঝতে পারেন দু’দিন আগে তাঁর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়েছে। তিনি বিমান ধরতে পারেননি। জরিমানা জমা দিয়ে তার পরে ফেরার উড়ান ধরেন।’’ সে সময়ে এক বাংলাদেশি কর্তা বলেছিলেন, ‘‘তার মানে লিটন দাস যদি ভিসার মেয়াদের এক দিন বাড়তি ভারতে থেকে যেতেন, তাঁকে মাত্র ১০০ টাকা দিতে হতো। যে হেতু ক্রিকেটারের নাম সইফ হাসান, তাঁকে ২১ হাজার টাকা দিতে হল।’’
ভিসার মেয়াদ ফুরনোর পরেও থাকলে জরিমানা
• পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের নাগরিকদের
কবে বাড়ল
• ২০১৯ সালে
কার কত বাড়ল
ওই তিন দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে —
• দু’বছরের বেশি হলে ৩৫ হাজার টাকা, ৯১ দিন থেকে দু’বছর ২৮ হাজার টাকা, ৯০ দিন পর্যন্ত ২১ হাজার টাকা
ওই তিন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য—
• দু’বছরের বেশি হলে ৫০০ টাকা, ৯১ দিন থেকে দু’ বছর ২০০ টাকা, ৯০ দিন পর্যন্ত ১০০ টাকা
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সিএএ-এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের সার্বিক ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে আসার পর ঢাকাকে তুষ্ট করতে প্রথমে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পরে বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আসরে নেমেছেন। বলা হচ্ছে বিষয়টি একান্ত ভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ। কিন্তু যে তিনটি দেশ নয়া নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র সঙ্গে যুক্ত, দেখা যাচ্ছে বছর খানেক আগে ঠিক সেই দেশগুলির জন্য বিতর্কিত নিয়মটি করা হয়েছে। কেন এই বৈষম্য, তার কোনও উত্তর অবশ্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।