Coronavirus

কে আগে পাবে, কে পরে, এ বার ভয় ‘ভ্যাকসিন রাজনীতি’র

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’-এর বিপদ বোঝা গিয়েছিল সেই ২০০৯ সালেই।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২০ ০৪:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

এগারো বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি! যা দেখে আগাম সতর্কবার্তা দিচ্ছে বিজ্ঞানী-গবেষক মহল। কারণ যে উদ্যোগে আমেরিকা, ইংল্যান্ডের মতো তথাকথিত উন্নত দেশগুলি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের আগাম বুকিং করে রাখছে, তাতে ভ্যাকসিন বাজারে এলে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলি তা পাবে কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’-এর বিপদ বোঝা গিয়েছিল সেই ২০০৯ সালেই। যখন সোয়াইন ফ্লু-র সময়ে বিশ্বের ধনী দেশগুলি ভ্যাকসিনের অগ্রিম বুকিং করে রেখেছিল। অর্থাৎ ভ্যাকসিন কার্যকর প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী সংস্থা তা ওই দেশগুলিকে দিতে বাধ্য থাকবে। যার ফল হয়েছিল, আফ্রিকার বহু দেশ প্রথম দিকে ভ্যাকসিন পায়নি। কারণ অগ্রিম বুকিং করার মতো অর্থ তাদের ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমেরিকা এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিজেদের মজুত করা ভ্যাকসিনের ১০ শতাংশ অন্য দেশগুলিকে দিতে রাজি হয়েছিল বটে, কিন্তু সেটাও এমন একটা সময়ে যখন তাদের আর ভ্যাকসিনের প্রয়োজন ছিল না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘এ বারও একই ঘটনা ঘটছে। কারণ ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ভ্যাকসিনের সুষম বণ্টন নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে বটে। কিন্তু তাতে এখনও বিশেষ লাভ হয়নি।’’

লাভ না-হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, এ বার করোনার সংক্রমণ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে এটা শুধুই চিকিৎসা বা গবেষণা মহলের পরিধির মধ্যে আবদ্ধ নেই। বরং তার সঙ্গে অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতিও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইমনকল্যাণ লাহিড়ী এ বিষয়ে বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন রাজনীতি শুরু হয়েছে, যেখানে মানুষের থেকে বড় হয়ে উঠেছে ব্যবসা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির আচরণে সেটাই দেখা যাচ্ছে। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই সেই আচরণ কিন্ত মানবিক থাকছে না।’’

Advertisement

তথ্য বলছে, আমেরিকা ইতিমধ্যেই একাধিক ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে। যেখানে যে সংস্থার ভ্যাকসিন কার্যকর প্রমাণিত হবে, সেই সংস্থা আমেরিকাকে নাগরিকপিছু অন্তত দু’টি ডোজ দেবে। একই চুক্তি করেছে ইংল্যান্ড, মেক্সিকো-সহ একাধিক দেশ। আর এখানেই বিপদ লুকিয়ে আছে বলে মনে করছেন অনেকে। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর এক আলোচনাসভায় সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট অলে পেটার ওটারসন এ বিষয়ে বলেছেন, ‘‘ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে পারে। ভ্যাকসিন বাজারে এলে তার যাতে ন্যায়যুক্ত ও সুষম বণ্টন হয়, তা দেখতে হবে।’’ দেশে কোভিড ১৯-এর কারণে গঠিত ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের প্রধান বিনোদ পালের কথায়, ‘‘শুধু ধনীরাই ভ্যাকসিন পাবেন, গরিবেরা নয়— এ রকম পরিস্থিতি মেনে নেওয়া হবে না।’’

তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কেনার জন্য আগাম প্রতিযোগিতা শুরু হলেও দেশের অভ্যন্তরীণ বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনও রকম অসাম্য করা হবে না বলেই আশ্বাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। আইসিএমআর-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্যাকসিন-বণ্টন নীতি ইতিমধ্যেই রয়েছে। ফলে রাজ্যগুলির মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হওয়ার আশঙ্কা কম।’’ আইসিএমআর-এর এমেরিটাস-বিজ্ঞানী নরেন্দ্র কে মেহরা বলছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা-ই হোক না কেন, আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের নিরিখে কাদের আগে দেওয়া উচিত, তা দেখেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ‘ভালনারেবল’ যাঁরা, তাঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অন্য কোনও বিষয় দেখা হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement