তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল বনাম কংগ্রেসের মধ্যে ‘সংঘাত’ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, সংসদে বিজেপি-বিরোধী ঐক্যে ওই দু’টি দল একে অপরের পাশে থাকবে, না কি ভিন্ন পথে হাঁটবে? সোমবার থেকে শুরু হবে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। তার আগে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী তৃণমূলের নাম না করে কটাক্ষ করেন, ‘‘কোনও কোনও বিরোধী দল এমনও আছে, প্রকাশ্যে হয়তো তারা বিরোধী, কিন্তু আসলে তারা সরকারপক্ষের সঙ্গেই রয়েছে। সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হলে তারা সরে দাঁড়ায়। কিন্তু কংগ্রেস এমন করে না।’’ এর পরই নাম না করে অধীর তথা কংগ্রেসকে কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। টুইটে লিখলেন, ‘সংসদে বিরোধী ঐক্য থাকবে। সাধারণ বিষয়গুলো বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করবে।’ তবে অন্য বিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূলের যে পার্থক্য রয়েছে, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে সোমবার বিরোধী দলগুলো নিয়ে বৈঠক ডাকেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। ওই বৈঠকে যোগ দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। তাদের ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, মুখে মোদী-বিরোধিতার কথা বললেও আসলে বিরোধী ঐক্য চাইছে না তৃণমূল। সেই কারণেই তারা কংগ্রেসের ওই বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছে।
অধীরের নাম না করে কটাক্ষের পরই পাল্টা দিলেন ডেরেক। সংসদে বিরোধী ঐক্য থাকবে এমনটা জানিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘একটা বিষয় উল্লেখ করতে হবে যে আরজেডি, ডিএমকে, সিপিআই এবং সিপিএম— এরা সকলেই কংগ্রেসের নির্বাচনী সহযোগী। এনসিপি-শিবসেনা এবং ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে সরকার চালায়। কিন্তু তারা আমাদের নির্বাচনী সহযোগী নয় এবং আমরা তাদের সঙ্গে সরকারও চালাই না। এটাই হল পার্থক্য।’ অর্থাৎ পরোক্ষে এটাই যেন বুঝিয়ে দেওয়া যে, কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে তৃণমূলকে যোগ দিতে হবে এমন কোনও বাধ্যতা নেই। কারণ, কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের কোনও ‘দেওয়া-নেওয়ার’ রাজনীতি নেই। আবার কংগ্রেসের উপর তারা নির্ভরশীলও নয়। কিন্তু বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে তারা অবিচল।
প্রসঙ্গত, বিরোধী বৈঠক ডাকা নিয়ে তৃণমূল-কংগ্রেসের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা যোগ করলেও দু’দলের দূরত্ব অনেক আগে তৈরি হয়েছে। ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়-সহ অনেক রাজ্যে কংগ্রেস সদস্যদের ‘ভাঙানোর’ অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আবার বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে, ঘাসফুলের নেতাদের নিশানার কেন্দ্রে হাত শিবির। সম্প্রতি তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে দিল্লি সফরে গিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তীক্ষ্ণ জবাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘‘প্রতি বার এলে দেখা করতে হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।’’ পরে সুর নরম করে বলেন, ‘‘ওরা পঞ্জাবের ভোট নিয়ে ব্যস্ত।’’ এর পর থেকে দু’দলের দূরত্ব যেন বেড়েই চলেছে।