অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।
দুর্নীতি আটকাতেই নোট বাতিলের ‘তেতো ওষুধ’ দিয়েছিলেন, মধ্যপ্রদেশে ভোটের প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী যখন এই দাবি করে যাচ্ছেন, তারই মধ্যে তাঁর সরকারের কৃষি মন্ত্রক কবুল করল, নোটবন্দির ধাক্কায় চাষিরা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে কৃষি মন্ত্রকের স্বীকারোক্তি, ২০১৬-র নভেম্বরে এমন এক সময় প্রধানমন্ত্রী নোটবন্দির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন, যখন দেশের কোটি কোটি কৃষক হয় খরিফ ফসল বেচতে ব্যস্ত, কিংবা রবি চাষের বীজ বোনা শুরু করছেন। দু’টি লেনদেনেই নগদের প্রয়োজন। কারণ দেশের ২৬ কোটির বেশি চাষি নগদেই কেনাবেচা করেন। নগদের অভাবে ওই বছরের রবি মরসুমে সার বা বীজ কিনতে পারেননি কোটি কোটি চাষি ।
কৃষি মন্ত্রকের এই স্বীকারোক্তিতে নতুন হাতিয়ার হাতে পেয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। তাঁর কথায়, ‘‘নোট বাতিল কোটি কোটি কৃষকের জীবন নষ্ট করে দিয়েছিল। ওঁদের কাছে বীজ-সার কেনার জন্যও যথেষ্ট নগদ ছিল না। কিন্তু আজও মোদীজি আমাদের কৃষকদের দুর্ভাগ্য নিয়ে রসিকতা করছেন। অথচ তাঁর কৃষি মন্ত্রকই বলছে, নোট বাতিল চাষিদের কোমর ভেঙে দিয়েছে।’’
কৃষি মন্ত্রকের এই সত্যকথনের সময়টাই চাপে ফেলেছে মোদীকে। এখনও চার রাজ্যে বিধানসভা ভোট বাকি। এ সময়ে মোদী-বিজেপির অস্বস্তি বাড়াচ্ছে কৃষক বিক্ষোভও। চলতি বছরেই মার্চের ৬ থেকে ১২, কৃষক-আদিবাসীদের ‘লং মার্চ’ বেজায় চাপে ফেলেছিল দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার ও মোদীকে। আজ তেমনই এক মিছিল শুরু হয়েছে ঠাণে থেকে। দু’দিন পরে তা শেষ হবে মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে। উত্তর মহারাষ্ট্র, বিদর্ভ, আহমেদনগর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩০ হাজার কৃষক ও আদিবাসী কৃষিঋণ মকুব, ফসলের উচিত দাম, খরাগ্রস্ত এলাকায় ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির দাবিতে এই মিছিলে শামিল হয়েছেন। সমর্থন করছে অরবিন্দ কেজরীবালের দল। দেশ জুড়ে এই সব কৃষক বিক্ষোভের শেষে দিল্লিতে হবে বড় সমাবেশ।
কৃষকদের ক্ষোভ উস্কে দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে তিনি আজ বলেন, ‘‘মোদী সরকার দিনে একটা করে মিথ্যে গল্প ফাঁদলেও, বাস্তব হল, নোট বাতিল ছিল পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতা। এর কোনও লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। এখন মধ্যপ্রদেশ-সহ গোটা দেশে কৃষকেরা আত্মহত্যা করছেন। কিন্তু ঋণ মকুবের সুরাহার কথা না-ভেবে তাদের একে-৪৭ দিয়ে গুলি করে মারা হচ্ছে।’’
নোট বাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন, ‘‘নোটবন্দি রাজনৈতিক নয়, নৈতিক পদক্ষেপ ছিল।’’ কিন্তু নোটবন্দি নিয়ে আলোচনা করতে বসা সংসদীয় কমিটিকে পেশ করা রিপোর্টে কৃষি মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই পদক্ষেপে কোটি কোটি চাষির প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল। শুধু ছোট চাষি নয়, বড় চাষি বা জমি মালিকরাও সঙ্কটে পড়েন। তাঁরা খেতমজুরদের দৈনিক মজুরি মেটাতে পারেননি। সমস্যায় পড়েন বীজ কিনতে গিয়েও। নগদের অভাবে ১.৩৮ লক্ষ কুইন্টাল গম বীজ বিক্রি করতে পারেনি সরকারের বীজ নিগম। সরকার পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটে বীজ কেনার অনুমতি দেয়। বিক্রি বাড়েনি তাতেও।