—ফাইল চিত্র।
ফের রাহুল গাঁধীকে কংগ্রেস সভাপতি পদে ফেরানোর দাবি উঠল। এ বার লোকসভার দলীয় সাংসদদের সঙ্গে সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর বৈঠকে।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী সনিয়াকে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই অনুরোধ মেনে শনিবার তাঁদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন সনিয়া। লোকসভার সাংসদ হিসেবে বৈঠকে হাজির ছিলেন রাহুলও। সেখানেই কেরলের কে সুরেশ, অ্যান্টো অ্যান্টনি, তামিলনাড়ুর মাণিকম টেগোর, অসমের গৌরব গগৈ, আবদুল খালেক, বিহারের মহম্মদ জাভেদ, ওড়িশার সপ্তগিরি উলাকার মতো সাংসদেরা তাঁকে বলেন, ‘আপনি কংগ্রেস সভাপতি পদে ফিরুন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই দায়িত্ব নিন’।
তবে কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা হল রাহুলের সভাপতি পদে ফিরতে অনীহার একটা মূল কারণ হল, তিনি যে ভাবে দল চালাতে চান তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে। যেমন, চিনা অনুপ্রবেশ বা করোনা মোকাবিলা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন রাহুল। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের একাংশ মনে করছেন, এতে উল্টো ফল হবে। কারণ, এতে জাতীয়তাবাদের তাস আরও বেশি করে খেলার সুযোগ পাচ্ছে বিজেপি। তারা প্রচার করছে, সরকারের সমালোচনা করে রাহুল আসলে চিনেরই সুবিধা করে দিচ্ছেন। রাহুল অব্শ্য নিজের অবস্থান থেকে সরবেন না বলে এ দিনের বৈঠকেও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। দলীয় সূত্রে খবর তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী চিন নিয়ে মিথ্যে কথা বলছেন। যুক্তি দিচ্ছেন, এটা রাজনৈতিক তরজার বিষয় নয়। কিন্তু কংগ্রেসের দৃঢ় অবস্থান হল, দেশের সীমান্ত নিয়ে আপস না-করাটাই জাতীয় নিরাপত্তা।”
সনিয়ার এই বৈঠকের সময়ই কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ দিগ্বিজয় সিংহ টুইট করেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে জাতীয় রাজনীতি ও উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার আক্রমণাত্মক অবস্থানকে সমর্থন করি। যদি কংগ্রেসের কোনও নেতা একে সমর্থন করতে না পারেন, তা হলে তাঁরা কংগ্রেসে রয়েছেন কেন? কেউ মোদী সম্পর্কে নরম সুর নিতে চাইলে তা দলের মধ্যে বা প্রকাশ্যে বলার সাহস দেখান।’’ দলের তরুণ সাংসদদের মতোই দিগ্বিজয়ের দাবি, রাহুলের উচিত কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে বা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে দল গঠনের কাজ চালিয়ে যাওয়া। কারণ, কংগ্রেস নেতৃত্বের সামনে আসল চ্যালেঞ্জ হল, বুথ স্তর থেকে এআইসিসি পর্যন্ত আবার সংগঠন তৈরি করা। আর সেখানেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সক্রিয়তা দরকার।
কংগ্রেসের এক নেতা অবশ্য বলেন, ‘‘সভাপতির পদে না-থাকলেও রাহুলের নির্দেশেই সব কিছু চলছে। আবার সনিয়া গাঁধী সভানেত্রীর পদে থাকায় দলের মধ্যে প্রবীণ ব্রিগেডের সঙ্গে নবীন ব্রিগেডের দ্বন্দ্ব ধামাচাপা থাকছে।’’ সেই কারণেই গত বছরের ১৯ অগস্ট সনিয়া অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার সময় দ্রুত সাংগঠনিক নির্বাচন করে নতুন সভাপতি ঠিক করার কথা বলা হলেও এখনও তার কোনও লক্ষণই নেই।
কিন্তু তার সুযোগ নিচ্ছে বিজেপি-ও। কংগ্রেসের মধ্যে দ্বন্দ্ব উস্কে দিতে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা থেকে শুরু করে দলের নেতারা বলা শুরু করেছেন, কংগ্রেসে গাঁধী পরিবারের বাইরে অনেক যোগ্য লোক থাকলেও তাঁরা গুরুত্ব পান না। ফলে আজ সাংসদদের বৈঠকে যে ভাবে রাহুলকে সভাপতি পদে ফেরানোর দাবি উঠেছে, তার পিছনে গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে অসন্তোষ তৈরির কৌশল ভোঁতা করে দেওয়ার চেষ্টাও দেখছেন অনেকেই।