প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোনও বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গেলেই সৎকারের জন্য ডাক পড়ে তাঁর। কখনও কখনও নিজেও অনেক বেওয়ারিশ লাশের সৎকার করেন। হাসপাতালের মর্গে দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে থাকা কোনও ব্যক্তির দেহ যদি তাঁর পরিবার বা আত্মীয় দাবি না জানান, নিজের উদ্যোগেই সেই দেহের সৎকারের ভার তুলে নেন। এ ভাবেই গত দু’বছর ধরে হাজার হাজার লাশের সৎকার করে আসছেন।
তিনি পূজা শর্মা। বছর ছাব্বিশের এই তরুণী গত দু’বছর ধরে চার হাজারেরও বেশি বেওয়ারিশ লাশের সৎকার করেছেন নিজের হাতে। শুধু তাই-ই নয়, তিনি নিজেই টাকা খরচ করে এই কাজ করেন। কিন্তু কেন এই কাজ করছেন তিনি? তাঁর এই কাজের নেপথ্যে এক করুণ কাহিনি রয়েছে, সেটাই সংবাদমাধ্যমকে শুনিয়েছেন পূজা।
দিল্লির শাহদরা এলাকার বাসিন্দা পূজা। ওঁরা দুই ভাইবোন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় পূজার দাদাকে। আর সেই ঘটনাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। পূজা বলেন, “২০২২ সালের ১৩ মার্চ। আমার সামনেই দাদাকে গুলি করল কয়েক জন। একটা ছোট ঝামেলা হয়েছিল। তার পর দাদাকে গুলি করে ওরা। চোখের সামনে অসহায়ের মতো মরতে দেখলাম দাদাকে।” তিনি আরও বলেন, “দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা কোমায় চলে যায়। পরিবারের উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল।” পূজা জানান, নিজের হাতে দাদার সৎকার করেছেন। আর সেই মুহূর্ত থেকে সিদ্ধান্ত নেন বেওয়ারিশ লাশের সৎকার করবেন। সেই থেকে পথ চলা শুরু।
পূজার কথায়, “পুলিশ এবং সরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে এ রকম বেওয়ারিশ লাশের খোঁজ নিতাম প্রথম প্রথম। সেগুলির সৎকার করতাম। এখন পুলিশ এবং সরকারি হাসপাতালগুলি বেওয়ারিশ লাশের খোঁজ পেলেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে।” কোথা থেকে এই সৎকারের টাকা পান? পূজার দাবি, তাঁর ঠাকুরদা যে পেনশন পান সেই টাকাতেই এই কাজ করেন। বাবা এবং ঠাকুরদার সঙ্গে থাকেন পূজা। বাবা দিল্লি মেট্রোয় চুক্তিভিত্তিতে চালকের কাজ করেন।
সোশাল ওয়ার্ক-এ স্নাতকোত্তর (মাস্টার অফ সোশাল ওয়ার্ক) পূজা। তাঁর কথায়, “আমি এই কাজকে বেছে নিয়েছি বলে অনেকেই আমার থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চান। এমনকি আমার বন্ধুদের পরিবারও আমার সঙ্গে বন্ধুদের মিশতে দেয় না। বিয়েও ঠিক হয়েছিল। কিন্তু পাত্রপক্ষ যখন জানতে পারে আমি সৎকারের কাজ করি, সম্বন্ধ ভেঙে যায়।” তবে এত কিছু সত্ত্বেও আফসোস নেই পূজার। তিনি এই কাজ করেই মনের শান্তি পান। আর এ কাজ তিনি চালিয়েও যাবেন বলে জানিয়েছেন পূজা।