ডিসিপিকে পাশে নিয়ে এ ভাবেই হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল কপিল মিশ্রকে। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
কপিল মিশ্র-সহ বিজেপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য নিয়ে মামলা শুনতে রাজি হল সুপ্রিম কোর্ট। ক্ষতিগ্রস্তদের তরফে আদালতে একটি আবেদন জমা পড়েছিল। তাতে কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর এবং প্রবেশ বর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের আর্জি জানানো হয়। আগামী বুধবার সেই মামলা শুনতে রাজি হয়েছে শীর্ষ আদালত।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষে গত সপ্তাহে তেতে উঠেছিল উত্তর-পূর্ব দিল্লি। তাতে এখনও পর্যন্ত ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০০-র বেশি মানুষ। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর জন্য কপিল মিশ্র-সহ বিজেপিনেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যকেই দায়ী করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন তাঁরা। তাতে বলা হয়, উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর এবং প্রবেশ বর্মার বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করতে হবে। দিল্লির বাইরে থেকে অফিসারদের এনে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে, তাদের হাতে তুলে দিতে হবে তদন্তভার। উত্তর-পূর্ব দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে নামাতে হবে সেনা।
সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতির নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনেরও আবেদন জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। সেই সঙ্গে এখনও পর্যন্ত যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের একটি তালিকা প্রকাশের অনুরোধ করা হয়েছে। সামনে আনতে বলা হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার সিসিটিভি ফুটেজও। সংঘর্ষের শিকার হয়ে এখনও পর্যন্ত যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টও সংশ্লিষ্ট পরিবারের হাতে তুলে দিতে আর্জি জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: পবনের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ রাষ্ট্রপতির, কাল ফাঁসির দিন
সোমবার এ নিয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস। জরুরি ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি করতে হবে বলে আর্জি জানান তিনি। আদালেত তিনি বলেন, বিক্ষোভ থিতিয়ে এলেও এখনও পর্যন্ত মৃত্যুমিছিল অব্যাহত দিল্লিতে। রবিবারও বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাঁর আর্জিতে সাড়া দিয়ে মামলার শুনানিতে রাজি হয় প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি এ দিন বলেন, ‘‘আমরাও খবরের কাগজ পড়ি। সেখানে আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। আমাদের উপর অনেক চাপ রয়েছে। কিন্তু আমরা তো আর এই ধরনের ঘটনা রুখতে পারি না। প্রাণহানি একেবারেই চাই না আমরা। বরং চাই, সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক। আমরা বিষয়টি শুনব। কিন্তু একটা কথা বুঝতে হবে, কিছু ঘটে যাওয়ার পরেই পদক্ষেপ করতে পারে আদালত। হিংসা রোখার ক্ষমতা আদালতের নেই।’’
আরও পড়ুন: ‘পরিকল্পিত গণহত্যা হয়েছে দিল্লিতে’, নেতাজি ইন্ডোরের মমতা
উস্কানিমূলক মন্তব্যে এফআইআরের দাবি নিয়ে এর আগে দিল্লি আদালতেও আবেদন জমা পড়েছিল। গত বুধবার তার শুনানিতে দিল্লি পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি এস মুরলীধর। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অফআইআর করা হবে কি না, তা না হলে সমাজের কাছে কী বার্তা যাবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তার জন্য দিল্লি পুলিশকে একদিন সময় দেন তিনি। কিন্তু সেই রাতেই বদলি হয়ে যেতে হয় তাঁকে। তার পর দিন বিচারপতি ডিএনম পটেলের তত্ত্বাবধানে নতুন করে শুনানি শুরু হয়। তাতে দিল্লি পুলিশকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। একটি পক্ষ হিসাবে মামলার অন্তর্ভুক্ত করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারকেও। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই সংক্রান্ত সবিস্তার রিপোর্ট দিতে বলা হয়।