উস্কানিমূলক মন্তব্য নিয়ে কড়া অবস্থান আদালতের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য এ বার বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র-সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছে, উস্কানিমূলক মন্তব্যের ক্ষেত্রে এফআইআর দায়ের করার ক্ষেত্রে কোনওরকম দেরি করা চলবে না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বৃহস্পতিবারের মধ্যে আদালতকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে দিল্লি পুলিশকে।
গত চারদিন ধরে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। ব্যাপক ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে সেখানে। এই হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড যাঁরা ঘটিয়েছেন এবং যাঁরা তাতে ইন্ধন জুগিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের আর্জি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মান্দার। বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি।
এ দিন তার শুনানিতেই দিল্লি পুলিশকে তিরস্কার করে বিচারপতি এস মুরলীধর এবং বিচারপতি তলবন্ত সিংহের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি মুরলীধর বলেন, ‘‘সরকারি সম্পত্তি নয়ছয় এবং অগ্নিসংযোগ নিয়ে এফআইআর দায়ের করতে উদগ্রীব আপনারা। অথচ উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য এফআইআর দায়ের করছেন না কেন? নাকি এর মধ্যে কোনও অপরাধ আছে বলে মনে করেন না আপনারা?’’
আরও পড়ুন: আতঙ্কে আছি, পুলিশ কিছু করছে না! ডোভালকে নালিশ ছাত্রীর
এই ধরনের কোনও ঘটনার কথা তাঁরা জানেন না বলে এ দিন দিল্লি পুলিশের হয়ে আদালতে দাবি করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাতে আরও চটে যান বিচারপতি মুরলীধর। সঙ্গে সঙ্গে আদালত কক্ষে কপিল মিশ্রর বিতর্কিত মন্তব্যের ভিডিয়ো চালাতে নির্দেশ দেন তিনি, যেখানে জাফরাবাদে গিয়ে হুমকি দিতে দেখা যায় তাঁকে। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে প্রকাশ্যে উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছিল বিজেপির অনুরাগ ঠাকুর এবং প্রবেশ বর্মাকেও। তাঁদের সেই মন্তব্যের ভিডিয়োও চালানো হয় আদালত কক্ষে।
এর পর ফের এক বার দিল্লি পুলিশকে তিরস্কার করেন বিচারপতি মুরলীধর। তিনি বলেন, ‘‘এফআইআর দায়ের করুন আপনারা। অগ্নিসংযোগ নিয়ে তো এফআইআর করতে মুখিয়ে ছিলেন আপনারা। উস্কানিমূলক মন্তব্যের বেলায় সেই উদ্যোগ কোথায় গেল? আপনারা যত দেরি করবেন, সমস্যা ততই বাড়বে। গোটা শহর জ্বলছে। এফআইআর দায়ের না হলে সমাজের কাছেও ভুল বার্তা পৌঁছবে।’’
তবে এর প্রেক্ষিতে পাল্টা যুক্তি দেন তুষার মেহতা। আদালতে তিনি জানান, ‘‘সব পক্ষেরই এমন নানা ভিডিয়ো রয়েছে। সে সব সামনে এলে পরিস্থিতি আরও তেতে উঠবে। কিন্তু বেছে বেছে এই তিনটি ভিডিয়োই আদালতে তুলে ধরেছেন আবেদনকারী।’’ বেছে বেছে ওই তিনটি ভিডিয়ো সামনে এনে আবেদনকারী দিল্লি পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: কার্ফু অগ্রাহ্য করে ইটবৃষ্টি, ঘরছাড়া বহু, অশান্ত দিল্লিতে মৃত্যু বেড়ে ২৩
কিন্তু তাতে আরও চটে যান বিচারপতি মুরলীধর। তিনি বলেন, ‘‘এতে তো ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। হাতের কাছে এত উস্কানিমূলক ভিডিয়ো থাকতেও কীসের জন্য অপেক্ষা করছেন আপনারা? কেন এফআইআর দায়ের করছেন না? পুলিশ কমিশনারের কাছে সমস্ত ভিডিয়ো জমা দিন। তার পর ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে দিন ওঁকে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে ফের শুনানি হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে, আর একটি আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্রীয় সরকারকেও কড়া বার্তা দেয় আদালত। বিচারপতি মুরলীধর বলেন, ‘‘সাংবিধানিক পদাধিকারীরা জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান। কিন্তু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কে দেখবে। সময় এসেছে, তাঁদের কাছে পৌঁছনোর। প্রত্যেকেরই যে সেই নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, তা বোঝানোর সময় এসেছে।’’
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষের জেরে রবিবার দিল্লির পরিস্থিতি হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। তার পর থেকে টানা চারদিনে ব্যাপক ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা সামনে এসেছে। ইটবৃষ্টির পাশাপাশি গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। তাতে এখনও পর্যন্ত ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। একাধিক এলাকায় প্রাণভয়ে ঘর ছেড়েছেন বহু মানুষ। এ দিন তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে দিল্লি হাইকোর্ট বলে, বিভিন্ন দলের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সকলকে একজোট হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
বিচারপতি মুরলীধর বলেন, ‘‘শহরে ১৯৮৪-র পুনরাবৃত্তি হতে দিতে পারি না আমরা, অন্তত আদালত চোখের সামনে এমনটা ঘটতে দেওয়া যায় না। শুনলাম এক জন গোয়েন্দা অফিসারের উপরও হামলা চালানো হয়েছে। এগুলো অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।’’