নিহত আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মা (বাঁ দিকে) ও তাহির হুসেন। —ফাইল চিত্র
আপ কাউন্সিলর তাহির হুসেনের বিরুদ্ধে আইবি কর্মী অঙ্কিত শর্মাকে খুনের মামলা দায়ের হল দিল্লির দয়ালপুর থানায়। দিল্লির হিংসায় দলের নেতার নাম জড়ানোয় বিড়ম্বনায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘আমার দলের কেউ জড়িত থাকলে দ্বিগুণ শাস্তি হোক।’’ রাতে আপ নেতৃত্ব দলের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করেছে তাহিরের।
নিহত আইবি কর্মী অঙ্কিতের বাবা প্রথম থেকেই বলে এসেছেন, ছেলের হত্যায় তাহিরের হাত আছে। বিজেপির দাবি, তাহিরই খজুরী খাসে সংঘর্ষের নাটের গুরু। একটি ভিডিয়োয় (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করে দেখেনি) দেখা গিয়েছে, তাহির ছাদে লোকজন নিয়ে লাঠি-রড হাতে ঘুরছেন। ওই বাড়িতে আজ ক্রেটে ক্রেটে পেট্রোলবোমা, প্রচুর অ্যাসিডের পাউচ, ইট-পাথর দেখা গিয়েছে।
তাহিরের দাবি, অঙ্কিত হত্যার সঙ্গে তাঁর যোগ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ভিডিয়ো ২৪ ফেব্রুয়ারির। সে দিন হামলাকারীরা দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমি লাঠি হাতে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলাম।’’ রাতে পুলিশ এসে সব দেখার পরেই সপরিবার ওই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।’’ তাহির বলেছেন, ‘আমি পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি। আমিও ন্যায়বিচার চাই।’’
এ দিকে হিংসা ঠেকাতে সক্রিয় না-হওয়া ও নীরব থাকা নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে কেজরীবাল ও তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা। প্রশ্ন এক, সদ্য হওয়া ভোটে আপকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির হিংসা-বিধ্বস্ত এলাকার মুসলিমরা। তবু কেন রবিবার রাতেই জাফরাবাদে গেলেন না কেজরীবাল? মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় গেলে তাঁর নিরাপত্তার জন্য দিল্লি পুলিশকেও অতিরিক্ত বাহিনী পাঠাতে হত। তাতে সাময়িক ভাবে হলেও ছেদ পড়ত সংঘর্ষে। প্রশ্ন দুই, আপ ক্যাডার-ভিত্তিক দল আপ। প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁরা কেন সক্রিয় হলেন না? মঙ্গলবার মধ্যরাতে হাইকোর্টের বিশেষ অধিবেশনে অভিযোগ উঠেছিল, উপদ্রুত এলাকার আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ সাহায্য চেয়ে ফোন করলে একাধিক আপ বিধায়ক সব শোনার পর ফোন কেটে দিয়েছেন, কিংবা ওটা নিজের এলাকা নয় বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
এই সব প্রশ্নের মুখে, গত কাল রাত থেকে ক্ষত মেরামতে নেমেছেন কেজরীবাল। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পরে তিনি গত কাল রাতে উপদ্রুত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। ভাবমূর্তি মেরামতিতে আজ একগুচ্ছ ঘোষণা করেন। দিল্লি ভোটের আগে থেকেই কেজরীবাল নিজের কাজ নিয়ে সরব থেকেছেন। জাতীয় যে কোনও প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটে থেকেছেন। উল্টো দিকে ‘দেশের সুরক্ষা’ নিয়ে বিজেপি বরাবরই বেশি সরব। আজ কিন্তু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শুধু দিল্লিবাসীর নয়, ‘দেশের সুরক্ষার’ সঙ্গে আপস না করার কথাও শোনা গিয়েছে। রাজধানীতে গুঞ্জন, কেন্দ্রে মোদীর ভোটারদের অনেকে আপেরও ভোটার। এ কি তাঁরই প্রতিফলন! ‘হনুমানজি’র ভক্তির নরম হিন্দুত্বের সঙ্গে যোগ হল কি ‘দেশভক্তি’ও!