গোকুলপুরী। ছবি: পিটিআই।
দিল্লি হিংসার আগে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার আর্জি ৬ মার্চ শুনতে দিল্লি হাইকোর্টকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শান্তি ফেরানোর জন্য কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি না তাও খতিয়ে দেখতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
দিল্লি হিংসার আগে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ জন। কিন্তু হাইকোর্ট সেই আর্জি ১৩ এপ্রিল শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার পরেই সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান আবেদনকারীরা।
আজ প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের বেঞ্চ জানিয়েছে, এত দীর্ঘ দিন ধরে ওই আর্জিগুলির শুনানি স্থগিত রাখা ঠিক নয়। দ্রুত সেগুলির নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। এই বিষয়ে অন্য কোনও আর্জি থাকলে সেগুলিরও দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। সেইসঙ্গে বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করা সম্ভব কি না, তাও খতিয়ে দেখতে পারে হাইকোর্ট।
আজ সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনজীবী কলিন গনজালভেস বলেন, ‘‘উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়েও চার জন বিজেপি নেতা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’ বিচারপতিরা বলেন, ‘‘সংঘর্ষে জড়িত দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই এফআইআর করলে সমস্যা বাড়বে না। কিন্তু এক পক্ষের বিরুদ্ধে করলে গোলমাল বাড়তে পারে।’’ এই শুনানিতেই আবেদনকারী হর্ষ মন্দারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। গনজালভেসের সওয়ালের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আবেদনকারীরা আদালতের অবমাননা করছেন। তা ছাড়া যে উস্কানিমূলক বক্তৃতার কথা তাঁরা বলছেন সেগুলি দেওয়া হয়েছিল জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে। সেগুলির নির্দিষ্ট অংশকে এই মামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় সমস্যা সামলাচ্ছেন তাঁদেরই এফআইআরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হোক।’’
আবেদনকারীদের আইনজীবী করুণা নন্দী জানান, অভিযুক্তেরা রাজীব চক মেট্রো স্টেশনেও উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘মন্দারও তো কোর্টের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা জানতে চাই ঠিক কে কে আইন ভেঙেছেন?’’
গনজালভেস বলেন, ‘‘বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিল্লি ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তাঁরা। তার পরে সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদীরা রাস্তা থেকে অবরোধ না তুললে তাঁরা রাস্তায় নামবেন। তার পরেই সংঘর্ষ শুরু হয়।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, বিজেপি সাংসদ প্রবেশ বর্মা ও বিজেপি বিধায়ক অভয় বর্মার বক্তব্যও উল্লেখ করেন গনজালভেস।
সলিসিটর জেনারেল জানান, দিল্লি হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে তাঁকে সকাল সাড়ে দশটায় নোটিস দিয়ে সাড়ে বারোটার মধ্যেই কেন্দ্রের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছিল। তিনি এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
বিজেপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা বা প্রশান্ত ভূষণের মতো ব্যক্তিত্বকে ওই এলাকায় পাঠিয়ে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করা যায় কি না, তা জানতে চায় বেঞ্চ। ভূষণের নামে প্রবল আপত্তি জানান মেহতা। গনজালভেস জানান, পুলিশ মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলে সংঘর্ষ এড়ানো যেত। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘সংঘর্ষ নিয়ে আমাদেরও কিছু অভিজ্ঞতা আছে।’’