সংসদ ভবন। —ফাইল চিত্র।
লোকসভার পর এ বার রাজ্যসভায় পেশ হতে চলেছে দিল্লির আমলা নিয়োগ এবং বদলি সংক্রান্ত ‘জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লি (সংশোধনী) বিল ২০২৩’ (দিল্লি বিল)। সোমবার রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। অন্য দিকে, সংসদে বিরোধী শিবিরের সব সাংসদের উপস্থিত থাকার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে চাইছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। দলের রাজ্যসভার সব সাংসদকে বুধবার হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছে কংগ্রেস এবং আপ।
বিরোধী জোট সূত্রে খবর, দিল্লি বিল নিয়ে আলোচনায় তাদের তরফ থেকে নেতৃত্ব দেবেন কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। ঘটনাচক্রে, সুপ্রিম কোর্টেও দিল্লি সরকারের হয়ে এই সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স নিয়ে সওয়াল করছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের এই আইনজীবী-নেতাই। দিল্লি বিল নিয়ে আলোচনায় বুধবার রাজ্যসভার অধিবেশন উত্তপ্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যসভায় বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও, বন্ধু এবং সহযোগী দলগুলির সহায়তায় অনায়াসেই বিলটি পাস করিয়ে নিতে পারবে সরকার।
রাজ্যসভায় বর্তমানে ২৩৭ জন সাংসদ আছেন। দিল্লি বিলটি পাস করানোর জন্য সরকারের ১১৯ জন সাংসদের সাহায্য প্রয়োজন। বিজেপি এবং তার সহযোগী দলগুলির ১০৫ জন সাংসদ আছেন রাজ্যসভায়। কিছু দিন আগেই অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং ওড়িশার শাসকদল বিজু জনতা দল (বিজেডি) এই বিলে সরকারের পক্ষে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দু’টি দলেরই ন’জন করে সাংসদ আছে রাজ্যসভায়। এ ছাড়াও পাঁচ জন মনোনীত সাংসদ এবং দু’জন নির্দল সাংসদের সমর্থন পেলে মোট ১৩০ জনের সমর্থন তাদের দিকে থাকবে বলে মনে করছে সরকারপক্ষ। অন্য দিকে, রাজ্যসভায় ইন্ডিয়া জোটের ১০৪ জন সাংসদ রয়েছেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েক জন গরহাজির থাকতে পারেন বলে সূত্রের খবর। রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড হওয়ায় এই সংক্রান্ত আলোচনা এবং ভোটদানে অংশ নিতে পারবেন না আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ। মায়াবতীর বিএসপি এবং আরও কিছু ছোট দল ভোটদানে অংশ নেবে না বলে জানা গিয়েছে।
গত ৩ অগস্ট লোকসভায় ধ্বনি ভোটে পাস হয় দিল্লি বিল। দীর্ঘ আলোচনার পর কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে অধিবেনকক্ষ ত্যাগ করেন বিরোধী সাংসদেরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করেছিল, শীর্ষ আদালতেই তা চ্যালেঞ্জ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান কেজরীওয়াল। সেই মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। গত ৩০ জুন দিল্লি সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের জেরে দিল্লির ‘ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন’-এর চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বলে সরকার পক্ষের তরফে অভিযোগ করায় ১৭ জুলাই ‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্রের সন্ধান করার’ কথা বলে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের। এর পর হঠাৎ গত ১৯ মে গভীর রাতে অর্ডিন্যান্স এনে ১০ পাতার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাতে বলা হয়, ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হচ্ছে। আমলাদের নিয়োগ ও বদলির ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। অধ্যাদেশে জানানো হয়, (দিল্লির) মুখ্যমন্ত্রী হবেন এর চেয়ারপার্সন। সদস্য হিসেবে থাকবেন মুখ্যসচিব এবং প্রিন্সিপাল স্বরাষ্ট্রসচিব। নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত এই কর্তৃপক্ষ ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত করবেন। মতবিরোধ হলে শেষ কথা বলবেন উপরাজ্যপাল।