দিল্লিতে মাত্রাছাড়া দূষণ। এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না। ছবি: পিটিআই।
রাজধানী দিল্লিতে মাত্রা ছাড়িয়েছে দূষণ। টানা দু’দিন ধরে হাঁসফাঁস অবস্থা বাসিন্দাদের। পরিস্থিতি নিয়ে একে অন্যের দিকে আঙুল তুলছে দিল্লির আপ এবং কেন্দ্র সরকার। এর মধ্যেই স্কুল বন্ধ করেছে নয়ডা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হবে অনলাইনে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত এই নিয়মই চালু থাকবে। রাজধানীর রাস্তায় চলবে না পণ্যবাহী ট্রাকও। দূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘দ্রুত পদক্ষেপ’ করার আর্জি জানিয়ে আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। পরের সপ্তাহে আবেদন শুনবে সুপ্রিম কোর্ট।
শুক্রবার সারা দিনেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হবে না। কারণ বাতাসের প্রবাহ। দিল্লির আশপাশে রাজ্যগুলিতে ফসল পোড়ানোর কারণেই প্রতি বছর দীপাবলির পর থেকে বাড়তে থাকে দূষণের মাত্রা। একটি বেসরকারি আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, ফসল পোড়ানো হচ্ছে যে সব জায়গায়, সেখান থেকে দিল্লির দিকে প্রবল বেগে ছুটে আসছে হাওয়া। সে কারণে ক্রমেই বাড়ছে দূষণ।
শুক্রবার সকাল ৬টায় দিল্লিতে বায়ুর গুণমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স)-এর মাত্রা ৪৫৩। এই মাত্রা ৩০০-র বেশি হলে তা বিপজ্জনক বলে ধরা হয়। ৪০০-র মাত্রা পার হলে তাকে ‘বিপজ্জনক’ বলে ধরা হয়। সেখানে দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে এই সূচকের মাত্রা ৪৮৫। বিমানবন্দরের আশপাশে এই সূচক ৪৫৩। নয়ডাতে এই সূচকের মাত্রা ৫৬২ আর গুরুগ্রামে ৫৩৯।
এই মাত্রাছাড়া দূষণের কারণেই নয়ডার সব স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ভাবে ক্লাস হবে অনলাইনে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদেরও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছেন গৌতম বুদ্ধ নগরের ডিস্ট্রিক্ট ইনস্পেক্টর অব স্কুল ধর্মবীর সিংহ। নয়ডার প্রায় ১,৮০০ স্কুলে মাঠে গিয়ে খেলাধুলোও নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ট্রাক চলাচলে লাগাম পরিয়েছে দিল্লি। এক মাত্র জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ট্রাকই চলবে রাজধানীর রাস্তায়। পরিবহন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পণ্যবাহী ট্রাক যাতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য দিল্লিতে ঢোকার সব ক’টি রাস্তায় ১২০টি পর্যবেক্ষক দল মোতায়েন থাকবে।
অবস্থা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের আর্জি জানিয়ে শুক্রবার পিটিশন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তাতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে দূষণ নিয়ে তদারকির জন্য কমিটি গড়ার আর্জি জানানো হয়েছে। স্কুল, কলেজ, অফিস ভার্চুয়াল মাধ্যমে চালানোর আবেদনও করা হয়েছে। দিল্লিতে যদিও এখনও খোলা রয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দফতর।
এই পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালের দিকেই আঙুল তুলেছে বিজেপি। শুক্রবার দিল্লি বিজেপি সভাপতি আদেশ গুপ্তা কটাক্ষ করে কেজরীওয়ালকে ‘পার্ট-টাইম মুখ্যমন্ত্রী’ বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেজরীর এখন দিল্লির জন্য সময় নেই। গোটা দেশে সফর করতে হচ্ছে তাঁকে।’’ প্রসঙ্গত, গুজরাট ভোটের দিকে নজর রেখে বার বার সে রাজ্যে যাচ্ছেন কেজরী। সেই নিয়েই খোঁচা দিয়েছে বিজেপি। যদিও আপ সরকার এই অভিযোগ মানেনি। শুক্রবার দূষণ নিয়ে বৈঠকে বসছেন দিল্লির পরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাই। সেখানেই স্থির হবে পরবর্তী পদক্ষেপ।