ফাইল চিত্র।
নির্বাচনের সময়ে দেওয়া বক্তৃতা ও অন্য সময়ে দেওয়া বক্তৃতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলে মন্তব্য করল দিল্লি হাই কোর্ট। বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর ও পরবেশ বর্মার বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণের মামলায় এই মন্তব্য করেছে আদালত। উচ্চ আদালতের মতে, অনেক কথা হাসি মুখে বললে তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু সে কথাই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বললে তা অপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগে বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর ও পরবেশ বর্মার বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণের অভিযোগ ওঠে। তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ চেয়ে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হন সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট। নিম্ন আদালত সেই আবেদন খারিজ করে। তার পরে দিল্লি হাই কোর্টের শরণাপন্ন হন বৃন্দা। ওই মামলার শুনানিতেই শুক্রবার এই মন্তব্য করেছেন বিচারপতি চন্দ্রধারী সিংহ। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘এটা কি নির্বাচনী বক্তৃতা? নির্বাচনী বক্তৃতা আর সাধারণ সময়ে দেওয়া বক্তৃতার পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ সময়ে কোনও বক্তৃতা দেওয়া হলে তা উস্কানি হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের সময়ে রাজনীতিকেরা একে অপরকে অনেক কথা বলেন। সেটাও ঠিক নয়। কিন্তু তাতে ফৌজদারি অপরাধ হচ্ছে কি না সেটা আমাকে বিচার করতে হবে।’’
বিচারপতির মতে, ‘‘অনেক সময়ে অনেক কথা হাসি মুখে বললে তা অপরাধের তালিকায় পড়ে না। কিন্তু সে কথাই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বললে তা অপরাধ হতে পারে। যদি এই ভারসাম্য বজায় না রাখা যেত তা হলে ভোটের সময়ে সব রাজনীতিকের বিরুদ্ধে হাজার হাজার এফআইআর দায়ের হত।’’ বিচারপতির মতে, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে সকলেরই বাকস্বাধীনতার অধিকার আছে। তাই কখন কোথায় কী উদ্দেশ্যে এই বক্তৃতা দেওয়া হয়েছে তা বিচার করা প্রয়োজন। ভোটে জেতার জন্য দেওয়া বক্তৃতা আর উস্কানি দিতে দেওয়া বক্তৃতা এক নয়।’’
পরবেশ বর্মার সংশ্লিষ্ট বক্তব্যের একটি অংশ তুলে ধরেন বিচারপতি। অভিযোগ, সেখানে পরবেশ বলেন, ‘‘এরা আপনাদের বাড়িতে ঢুকে মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করবে।’’ বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এখানে এরা বলতে কাদের কথা বোঝানো হচ্ছে? আবেদনকারীরা কেন ধরে নিচ্ছেন যে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্যদের কথাই বলা হচ্ছে?’’ আবেদনকারীর আইনজীবী অদিত পূজারী জানান, শাহিন বাগ আন্দোলনকারীদের প্রেক্ষিতে এ কথা বলেছেন পরবেশ। বিচারপতি জানতে চান, তবে কি কেবল একটি সম্প্রদায়ের সদস্যেরাই ওই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন? তার প্রমাণ কোথায়?
আইনজীবী জানান, নির্বাচনী বক্তৃতা হোক না হোক ওই বক্তব্যে উস্কানিমূলক উপাদান রয়েছে। বিচারপতির জবাব, ‘‘আমি সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মন্তব্য করছি। বিশেষ ভাবে এই মামলার প্রেক্ষিতে নয়। ধরুন আপনি একটি পরিবেশ তৈরি করতে কোনও কথা বললেন। সেখানে আমি অপরাধ করার উদ্দেশ্য দেখতে পাচ্ছি না। কারণ অন্য রাজনৈতিক দল আবার অন্য কিছু বলে। সকলেই নিজের সমর্থকদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন।’’ শুক্রবার বৃন্দার মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছে আদালত।