জাতীয় পতাকা হাতে আরমান আলি। ফাইল চিত্র।
প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন অধিকার নির্দিষ্ট করে আইন প্রণয়ন ও বলবৎ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। কিন্তু আইন থাকলেও তার রূপায়ণে গা নেই কারও! প্রতিবন্ধীর হুইলচেয়ার গাড়িতে কোনও ভাবেই তুলতে রাজি হননি এক উব্রচালক। লাভ হয়নি প্রতিবাদে। উল্টে চালক বুকিং বাতিল করে দেন। মামলা করলেও পাত্তা দেয়নি উব্র। এত দিনে মামলা গ্রহণ করে শুনানির নোটিস পাঠাল দিল্লি হাই কোর্ট।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর প্রমোশন অব এমপ্লয়মেন্ট ফর ডিসেবলড পিপল বা এনসিপিইডিপি-র কার্যবাহী অধিকর্তা আরমান আলি চেন্নাই বিমানবন্দর যাওয়ার উদ্দেশে হোটেল থেকে উব্র ক্যাব বুক করেন। প্রথম ক্যাবের চালক বুকিং কনফার্ম করার পরেও কুড়ি মিনিট ঘুরিয়ে শেষ পর্যন্ত বুকিং বাতিল করে দেন। ফের বুকিং করেন আরমান। এ বারের চালক প্রতিবন্ধী যাত্রী দেখেই বেঁকে বসেন। ৮০ শতাংশ লোকোমোটর প্রতিবন্ধকতা থাকা আরমান বার বার অনুরোধ করেন, তাঁর হুইলচেয়ার ভাঁজ করে পিছনের আসনে রেখে দেবেন। কিন্তু চালকের দাবি, এতে তাঁর পিছনের সিট খারাপ হবে। তর্কাতর্কির পরে বুকিং বাতিল করে দেন ওই চালক। আরমানও বিমান ধরতে পারেননি। নতুন করে টিকিট কাটতে হয়। লোকসান হয় ১৪ হাজার টাকার। বেঙ্গালুরুর বৈঠকেও হাজির থাকতে পারেননি তিনি।
দিল্লি ফিরে বিষয়টি তিনি প্রতিবন্ধী কমিশনে জানালে তারা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে।
২০১৬ সালে পাশ হওয়া প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংক্রান্ত আইনে তাঁদের সঙ্গে গণপরিবহণ ব্যবস্থায় বৈষম্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনের ৮৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, এর ফলে ১০ হাজার থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া, অভিযোগের সাপেক্ষে তথ্য না দিলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানার কথা রয়েছে ৯৩ নম্বর ধারায়।
কিন্তু উব্র কোনও অভিযোগেই পাত্তা দেয়নি। আদালতের পাঠানো শো-কজ নোটিসের জবাব দেয়নি। এমনকি, বার বার শুনানির তারিখ ফেলা হলেও হাজির হননি সংস্থার কোনও প্রতিনিধি। বুকিং বাতিল বাবদ ৪৫ টাকা বাদে অন্য ক্ষতিপূরণও দেয়নি তারা। ঘটনার জন্য ক্ষমাও চায়নি।
পরে দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন জানান আরমান। হাইকোর্ট মামলাটি গ্রহণ করেছে। নতুন শুনানির নোটিস জারি করা হয়েছে।
আরমান বলেন, “অনেকের সঙ্গেই এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটছে। অথচ উব্র সংস্থা তাঁর চালক বা ড্রাইভার পার্টনারদের ‘ডিসেবলিটি সেনসিটাইজ়েশন প্রোগ্রাম’ করানোর কথা গর্ব করে দাবি করে। প্রতিবন্ধীদের জন্য অধিকার সংক্রান্ত আইন পাঁচ বছর আগে বলবৎ হয়েছে বটে, কিন্তু আইনের বিষয়ে মানুষ, সমাজ, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাদের সচেতনতা ও জ্ঞান মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। ফলে আইন থাকলেও তার বাস্তব সুফল প্রতিবন্ধীরা পাচ্ছেন না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা নিয়মিত হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।”