সূর্যা রাজপ্পন
কোথায় থাকছেন?
(একটু থেমে) দিল্লিতেই আছি। কিন্তু ঠিকানা যদি না বলি!
আপনার সঙ্গে সে-দিন কে ছিলেন?
সে নামও যদি না বলি।
সত্যিই এত ভয় পাচ্ছেন?
আসলে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল! ব্যক্তিটি তো অমিত শাহ। তবে যা করেছি, তার জন্য গর্বিত।
তিন বার ফোন করেও ধরেননি। তবে উত্তর দিলেন হোয়াটসঅ্যাপে। আর অনুরোধ করলেন, ‘‘ফোনটি হোয়াটসঅ্যাপেই করুন।’’ কে বলবে দিল্লিতেই জন্ম, বড় হওয়া, পড়াশোনা। আইন নিয়ে পড়ে এখন দিল্লি হাইকোর্টেরই আইনজীবী। কিন্তু ২৭ বছরের সূর্যা রাজপ্পনের জীবনটাই এক নিমেষে বদলে যায় গত রবিবার। যখন লাজপত নগরে তাঁর পাড়ায় গিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এক দিন আগেই খবর পেয়েছিলেন সূর্যা। অমিত তাঁর পাড়ায় আসছেন। দেশ জুড়ে এই আইনের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ। আর বিজেপি বোঝানোর চেষ্টা করছে, জনজোয়ার এই আইনের পক্ষে। সেই জন্য অমিতের সামনে প্রতিবাদ করার কথা মাথায় আসে। বাবাকে জানান। জানান কিছু আইনজীবী বন্ধুকেও। ফ্ল্যাটের সঙ্গী তো ছিলেনই। বিছানার চাদরেই তড়িঘড়ি লিখে ফেলেন, ‘শেম’, ‘নো সিএএ, নো এনআরসি’, ‘জয় হিন্দ’, ‘নট ইন মাই নেম’, ‘আজাদি’।
সেই ব্যানার বারান্দা থেকে ঝুলিয়ে স্লোগানও দেন সূর্যা। অমিত না-তাকিয়ে এগিয়ে যান। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিছনে থাকা বিজেপির কর্মীরা হুলস্থুল বাধান। তাঁদের সঙ্গ দেন বাড়িওয়ালা। ব্যানার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাড়িতে ঢোকার একমাত্র সিঁড়ি আটকে দেওয়া হয়। সূর্যা বলেন, ‘‘এমন হবে সত্যিই ভাবিনি। বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে বাড়িওয়ালাও বলতে শুরু করলেন, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বাবা-বন্ধু-সহকর্মীরা এলেন। কিন্তু ৩-৪ ঘণ্টা ধরে নীচের ভিড় তাঁদেরও উপরে উঠতে দেয়নি। অবশেষে পুলিশ ডাকতে হল। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’’
প্রায় মাঝরাতে পুলিশি নিরাপত্তায় ভাড়াবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয় সূর্যাকে। এখনও এফআইআর করেননি। জানা গিয়েছে, আত্মগোপন করে আছেন দক্ষিণ দিল্লির এক ডেরায়। ফোনে বললেন: ‘‘বাবার আশঙ্কা ছিলই, বাড়ি থেকে তাড়ানো হতে পারে। তবু সাহস জুগিয়ে গিয়েছে। জানতাম, অমিত শাহ, সর্বশক্তিমানের সামনে প্রতিবাদ করছি। না-করলেও আক্ষেপ হত।’’
প্রকাশ জাভড়েকর অবশ্য আজই বলেছেন, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা সকলের আছে।’’ কংগ্রেসের পাল্টা, ‘‘অমিত শাহের সামনে পোস্টার দিতেই বাড়ি থেকে উৎখাত হতে হল? বিজেপির বার্তা স্পষ্ট, যাঁরাই বিরোধিতা করবেন, পরিণতি এটাই।’’
এখন কী করবেন সূর্যা?
‘‘মাথা কাজ করছে না। শান্তিতে একটু ঘুমোতে চাই।’’