ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পকে এ বার ‘সেন্ট্রাল ফোর্টেস অব ডেথ’ আখ্যা দেওয়া হল দিল্লি হাই কোর্টে। তুলনা করা হল হিটলারের আউশভিৎজ় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গেও।
অতিমারি নিয়ন্ত্রণে সার্বিক অব্যবস্থার মধ্যেও মোদী সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যেতে একে ‘অত্যাবশ্যকীয় প্রকল্প’ তকমা দিয়েছে। দিল্লিতে লকডাউনের জন্য বাকি সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের নিয়ে এসে সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পে কাজ করানো হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজপথ পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজকর্মের কোনও রকম ছবি-ভিডিয়ো তোলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়ে মামলাকারীরা আজ তাই এই প্রকল্পকে আউশভিৎজ়ের জার্মান কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
মূলত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সেই প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। ইতিহাসবিদ সোহেল হাশমি ও অন্যান্য মামলাকারীদের বক্তব্য ছিল, এই প্রকল্পে কাজ চলার ফলে করোনা অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার বিরাট আশঙ্কা রয়েছে। যাঁরা দিনমজুরিতে কাজ করছেন, তাঁরাই সকলের আগে সংক্রমিত হয়ে পড়বেন।
আজ কেন্দ্রীয় সরকারের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা অভিযোগ তুলেছেন, কিছু লোক প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের কাজে বাধা দিতে চাইছেন। তাঁরাই জনস্বার্থ মামলার আড়ালে ফের প্রকল্প আটকাতে চাইছেন। প্রকল্পের বরাত পাওয়া শাপুরজি পালনজি সংস্থাও জনস্বার্থ মামলার বিরোধিতা করে বলেছেন, তাঁরা শ্রমিকদের সব রকম দেখাশোনা করছেন।
মামলাকারীদের হয়ে আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা বলেন, তাঁরা শুধু দিল্লির মানুষের জনস্বাস্থ্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। শ্রমিকদের জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। সেখানে বিছানাপত্র কিছুই নেই। চিকিৎসার পরিষেবা, কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে। কেন্দ্র মিথ্যে দাবি করছে যে শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কাজের জায়গায় থেকে গিয়েছেন।
দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এ বিষয়ে রায় সংরক্ষিত রেখেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই অতিমারির মধ্যেও মোদী সরকার রাজপথ ঢেলে সাজানোর কাজে অনড়?
মোদী সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পে দিল্লির ভারতীয় জাদুঘর, ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস ও ন্যাশনাল আর্কাইভের অ্যানেক্স ভবনও ভাঙা পড়বে। রোমিলা থাপার, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, ওরহান পামুকের মতো শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক থেকে অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিরাও মোদী সরকারের কাছে এই প্রকল্প বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন। বিরোধীদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র লক্ষ্য, ২০২২-এ স্বাধীনতার ৭৫-তম বছরে কোটি কোটি টাকা ঢেলে সাজানো রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন। সে কারণেই তিনি অনড়।