বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘতম উপকূলরেখা রয়েছে ভারতেরই। বৃহস্পতিবার তা স্মরণ করিয়ে দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি চিন সফরে গিয়ে বাংলাদেশকে বঙ্গোসাগরের ‘অভিভাবক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর ওই মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কের মাঝেই বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের গুরুত্ব বোঝালেন জয়শঙ্কর। তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বহুক্ষেত্রীয় প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চ ‘বিমসটেক’-এর বিষয়ে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ভারত সচেতন।
জয়শঙ্কর জানান, বঙ্গোপসাগরে প্রায় সাড়ে ছ’ হাজার কিলোমিটারের উপকূলরেখা রয়েছে ভারতের। বঙ্গোপসাগরে এটিই দীর্ঘতম উপকূলরেখা। বিমসটেক-এর পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে এবং সেগুলির মধ্যে বেশির ভাগ দেশকেই যুক্ত করে ভারত। শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্স’ (আসিয়ান) গোষ্ঠীর দেশগুলির মধ্যে সমন্বয়ও রক্ষা করে ভারত। বিশেষ করে উত্তরপূর্ব ভারতের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বিদেশমন্ত্রী জানান, এই যোগাযোগের কেন্দ্রস্থল হিসাবে উঠে এসেছে উত্তরপূর্ব ভারত। তিনি আরও জানান, ভারত বিশ্বাস করে সহযোগিতা একটি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়, কেবলমাত্র একটি লাভদায়ক বা সুবিধাজনক বিষয়কে বেছে নেওয়া নয়।
বস্তুত, গত সপ্তাহেই চার দিনের চিন সফরে গিয়েছিলেন ইউনূস। সেখানে গিয়ে তিনি দেখা করেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। চিনকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার আর্জি জানান তিনি। সেই সূত্রেই বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “সমুদ্রের (বঙ্গোপসাগর) একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।” চিন এবং বাংলাদেশ লাগোয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন যে, “ভারতের পূর্ব দিকের সাত রাজ্যকে বলা হয় সাত বোন। এগুলি স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা। এদের সমুদ্রে পৌঁছোনোর কোনও পথ নেই।”
ইউনূস চিনকে বোঝাতে চান, বাংলাদেশের ভৌগোলিক এই অবস্থানের কারণে বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করার ‘বড় সুযোগ’ পাবে বেজিং। তবে নিজের দেশে চিনা বিনিয়োগ আনতে ইউনূস কেন ভারতের প্রসঙ্গ তুলে আনলেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আগেই ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন। এ বার বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের ভারতের গুরুত্ব বোঝালেন জয়শঙ্কর। একই সঙ্গে গুরুত্ব বোঝালেন উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিরও।