স্থানীয়রা মইয়ের সাহায্যে অনেককে নীচে নামিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ সেই মই বেয়ে নামতে পারবেন কিনা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন।
অগ্নিকাণ্ডের পর মুন্দকার সেই বিল্ডিং। ছবি: পিটিআই।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার বিকেলে দিল্লির মুন্দকার অফিসে পৌঁছেছিলেন শাজিয়া পারভিন। তাঁর মতো অফিসের আরও প্রায় দেড়শো কর্মী হাজির হয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। বিকেল চারটে। তিনতলার হলঘরে তখন বক্তৃতা চলছে। অনুষ্ঠান চলার আধ ঘণ্টার মধ্যেই হলঘরের ও পাশ থেকে তাঁর সহকর্মীদের চিৎকার ভেসে আসতে শোনেন পারভিন। তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হলঘরের সকলে শুনতে পান— আগুন লেগেছে…পালাও…পালাও।
তত ক্ষণে আগুন তিনতলাকে প্রায় ঘিরে ফেলেছিল। পারভিন বলেন, “আগুনের কথা শুনে হলঘর থেকে বেরিয়ে তখন পড়িমরি করে যে যে দিকে পারছিলেন বাঁচার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু আগুনের হলকা আর তাঁর সঙ্গে কালো ধোয়াঁয় তখন গোটা তিলতলা ঢেকে গিয়েছিল।” প্রাণ বাঁচাতে কেউ ঝাঁপ মেরেছিলেন। স্থানীয়রা কিছু মানুষকে উদ্ধার করেছিল। কিন্তু অনেকেই পালাতে পারেননি। বিশেষ করে মহিলারা।
স্থানীয়রা মইয়ের সাহায্যে অনেককে নীচে নামিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ সেই মই বেয়ে নামতে পারবেন কিনা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সৌভাগ্যবশত পারভিন নিজেকে বাঁচাতে পেরেছেন। সামান্য চোট লেগেছে তাঁর।
আরও এক মহিলা দীক্ষা রাওয়তও ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, “হলঘরের দরজা খুলে বেরনোর চেষ্টা করতেই কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী গোটা ঘরকে ঢেকে দিয়েছিল। ওই ঘরে জানলা না থাকায় ধোঁয়া বেরতে পারছিল না। ফলে দমবন্ধ হয়ে আসছিল ক্রমশ। পুরো ঘরটা মোটা কাচে ঘেরা। চেয়ার, টেবল দিয়ে মেরেও কাচ ভাঙা যাচ্ছিল না।”
তিনি আরও জানান, ওই গোটা বাড়িটার একটাই বেরনোর পথ। সেই সিঁড়ি তখন আগুনে গ্রাস করে নিয়েছে। ঘরের ভিতরে তখন শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করছেন লোকজন। বাঁচার জন্য তখন পরিত্রাহী চিৎকার ঘর জুড়ে। হঠাৎই তাঁদের মধ্যে কেউ এক জন কাচ ভেঙে ফেলেছিলেন। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি। অনেকেই স্থানীয়দের সহযোগিতায় নীচে নামতে পেরেছিলেন। কিন্তু অনেকেই পড়ে যাওয়ার ভয়ে এগননি। তাঁদের মধ্যে মহিলাই বেশি ছিল। ফলে ঝলসে মৃত্যু হয় অনেকের।
শুক্রবারে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ অন্তত ৩০। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ৪০ জন আহতের। পুলিশি তদন্তে এখনও পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।