জয়ের খবর এসে পৌঁছতেই সমর্থকদের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন রাঘব চড্ডা। ছবি: পিটিআই।
কোথাও উড়ে আসছে টাটকা গোলাপের মালা। কোথাও বা একঝলক দেখা করার আকুতি!
বয়স ৩১। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তায় আবার অবিবাহিত সুপুরুষ। কান পাতলেও শোনা যায় না কোনও অ্যাফেয়ারের গল্প! একেবারে ‘এলিজিব্ল ব্যাচেলর’ যাকে বলে! আর এই সব সমাপতনে নিজেকে নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন ‘আপ’-এর জাতীয় মুখপাত্র রাঘব চড্ডা!
প্রচারে বেরলেই ‘মব্ড’ হয়ে যাওয়া ভারতীয় রাজনীতি ক্ষেত্রে কোনও নতুন কথা নয়। তবে প্রচারে বে়রিয়ে পাণিপ্রার্থীদের ভিড় সামলানোর রেকর্ড নেহাতই হাতে গোনা। কিশোর বয়স থেকেই মেয়েমহলে নজর কেড়ে নেওয়া লাজুক রাঘবকে ৩১-এ পৌঁছেও সামলাতে হচ্ছিল ঘন ঘন প্রেমের প্রস্তাব। কোথাও বা কৌশলে এড়িয়ে যেতে হচ্ছিল হবু জামাই হওয়ার প্রসঙ্গও।
আরও পড়ুন: ধর্মীয় মেরুকরণ নয়, উন্নয়নেই আস্থা রাখল দিল্লি
প্রচারে রাঘব চড্ডা। —ফাইল চিত্র।
রাজেন্দ্রনগর কেন্দ্র থেকে এ বার আপ-এর প্রার্থী হয়েছিলেন রাঘব। ভোটের ফল বলছে, বিপক্ষকে রীতিমতো ধরাশায়ী করে বিপুল ভোটে জিতেছেন তিনি। দলও ভাল ফল করেছে। তবে ভোটের ময়দানে নেমে শুধু বিপক্ষকে আক্রমণই নয়, ভালবাসার আবেদনও সামলাতে হয়েছে তাঁকে। রাঘবের ঘনিষ্ঠ এক অনুচর তো রসিকতা করে বলেই ফেললেন, ‘‘সকলে শুধু বিজেপি-ঝড় সামলেছে, রাঘবকে খেলতে হয়েছে দু’দুটো ঝড়ের সঙ্গে!’’
ঝড়ই বটে। প্রেমপ্রস্তাব ও বিয়ের বায়নায় ভেসে গিয়েছে রাঘবের টুইটার হ্যান্ডল। ফ্যান ক্লাবের সদস্য সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এক দিল্লিললনা তো রাঘবকে সরাসরি ট্যাগ করে টুইটারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েই বসেছেন! কেউ বা অত হাই ভোল্টেজ পাত্রের আশা ছেড়েও ছাড়তে পারছেন না। তাঁদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আর কাউকে নয়…।’’ এক জন তো সরাসরিই বলেছেন, রাঘব অন্য কাউকে বিয়ে করলে তাঁর হৃদয় ভেঙে যাবে! রাঘবের আজীবন অবিবাহিত থাকাও যেন তাঁদের কাছে প্লেটোনিক সুখ। অবস্থা এমনই যে, রাঘবের পোস্টের নীচে মেয়েদের ‘লভ’ ইমোজি গুনতে বসলে এক সময় ধৈর্য হারাতে হয়।
বাদ যাননি মধ্যবয়সিরাও। একটি স্কুলে প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে এক শিক্ষক রাঘবকে দেখেই বলে উঠলেন, তাঁর নিজের মেয়ে থাকলে রাঘবকে জামাই করতেন। সব ক’টি প্রস্তাবই কমবেশি হেসে পাশ কাটিয়েছেন রাঘব। কোথাও বা সলাজ মুখে চুপ করে থেকেছেন। কিন্তু জনসংযোগে নেমে কতই বা আর নিশ্চুপ থাকবেন? অগত্যা প্রেমপ্রস্তাবকে সামলাতে দেশের বেহাল অর্থনীতিকে ‘শিখণ্ডী’ করেছেন রাঘব। এক তরুণীর প্রস্তাবে জানিয়েছেন, ‘‘দেশের আর্থিক হাল এখন খুবই বেহাল, বিয়ের উপযুক্ত সময় নয় এটা।’’
আরও পড়ুন: ‘মাফলার ম্যান’ থেকে টানা তিন বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, কামাল করলেন কেজরীবাল
সেলফি-সঙ্গ। —ফাইল চিত্র।
এর আগে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়ালেও সে বার বিজেপির রমেশ বিধুরির কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন রাঘব। তবে এ বার আর তাঁকে ফেরায়নি রাজেন্দ্রনগর। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরপি সিংহকে ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে এই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন বিধানসভার টিকিট। ‘‘অরবিন্দ কেজরীবালের প্রশাসনিক মডেলই জিতেছে।’’ বড় ম্যাচ জেতার পরেও স্বভাবসুলভ বিনয়ে ছোট অথচ দামী প্রতিক্রিয়া দিতেও ভোলেননি। ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাজেন্দ্র নগরের জনগণকেও। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাঘবের এমন ফল নিয়ে হালকা রসিকতাও চলছে। নেটাগরিকদের মতে, ‘আপ’-এর কাজ, তাদের নির্বাচনী কৌশল তো বটেই, তবে রাজেন্দ্রনগরে এগুলোর সঙ্গে নাকি যোগ হয়েছে ‘এলিজিবল ব্যাচেলর’-এর মুখ। কেউ বা বলছেন, ‘‘রাজেন্দ্রনগরে কোনও মেয়ের ভোট কি বিরেধীরা পেয়েছেন? খোঁজ নিতে হবে!’’
তবে জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতলেও এমন ফলের পর ‘ক্রেজ’ কি আরও বাড়ল না রাঘবের? রাজেন্দ্রনগরের এই হবু বিধায়ক কোনও প্রেমপ্রস্তাবে ঘাড় কাত করবেন কি? মেয়েরা কিন্তু এখনও অপেক্ষায়!