গাড়ি রয়েছে বলেই রোজ গাড়ি চড়া আর হবে না দিল্লিতে। রাজধানীর বাতাসে দূষণের বিষ বেড়েছে এমন মারাত্মক যে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ করতে বাধ্য হল দিল্লি সরকার। কেজরীবাল মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, এ বার থেকে জোড় সংখ্যার নাম্বার প্লেটের গাড়ি যে দিন রাস্তায় নামবে, বেজোড় সংখ্যার নাম্বার প্লেটের সে দিন রাস্তায় নামা নিষেধ। পরের দিনটা হবে বেজোড়দের জন্য। জোড় সংখ্যা সে দিন ব্রাত্য হবে রাজধানীর রাজপথে। নিয়ম লঙ্ঘন করলেই কড়া শাস্তি।
দিল্লি হাইকোর্ট বৃহস্পতিবারই কঠোর সমালোচনা করেছে দিল্লির সরকারের। রাজধানীতে বাড়তে থাকা বায়ুদূষণের প্রসঙ্গে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতির মন্তব্য, দিল্লিতে বাস করা আর গ্যাস চেম্বারের মধ্যে থাকা সমার্থক। তার পরই বায়ুদূষণ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল। রাজধানীর বাসিন্দাদের এক বিরাট অংশ কর্মস্থলে যেতে নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করেন। ফলে দিল্লিতে গাড়ির সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত। এত গাড়ি চলাচল দূষণ বাড়ার অন্যতম কারণ। তাই রাজধানীর রাজপথে দৈনন্দিন যান চলাচলের পরিমাণ এক ধাক্কায় অর্ধেক কমিয়ে ফেলতে চাইছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে সব গাড়ির নাম্বার প্লেটের শেষ সংখ্যাটি বেজোড়, সেই গাড়িগুলি যে দিন রাস্তায় নামবে, জোড় সংখ্যা দিয়ে শেষ হওয়া নাম্বার প্লেটের গাড়ি সে দিন পথে নামবে না। পরের দিন ঠিক উল্টো ব্যবস্থা হবে। এই ব্যবস্থা অবশ্য শুধু বেসরকারি বা ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য। সরকারি গাড়ি বা সরকারি পরিবহন সংস্থার বাস এই নিয়মের আওতার বাইরে থাকবে। তাতেও দিল্লির পথে রোজকার গাড়ি চলাচলের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ফেলা যাবে বলে মনে করছে পরিবহন দফতর।
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই এই নিয়ম কার্যকর করতে চান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। দিল্লি সরকারের প্রধান সচিব কে কে শর্মা বলেছেন, ‘‘প্রতি বছরই শীতকালে দিল্লিতে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই কিছু দিনের জন্য জোড় ও বেজোড় সংখ্যার নাম্বার প্লেটের গাড়ি পরিবর্ত দিনে পথে নামবে। গোটা বিষয়টির রূাপয়ণ সহজ করতে আমরা এখনও নানা চিন্তাভাবনা চালাচ্ছি।’’
দিল্লিতে যাঁরা নিজেদের গাড়িতে চলাচল করতে অভ্যস্ত, নতুন বন্দোবস্ত চালু হওয়ার পর তাঁদের নিজেদের অভ্যাসের সঙ্গে আপস করতে হবে। এক দিন অন্তর এক দিন কর্মস্থলে যেতে তাঁদের গণপরিবহণ ব্যবস্থার উপরেই ভরসা করতে হবে। এই নতুন বন্দোবস্ত বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। কিন্তু, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, লন্ডন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন বড় শহরে দূষণ কমানো এবং ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির অবাধ ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে। পশ্চিমি দেশগুলির অনেক শহরেই পুলকারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। নিজের গাড়ি নিয়ে না বেরিয়ে পুলকারে যাতায়াতের জন্য নাগরিকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। মার্কিন মুলুকে পুলকারের (পাঁচ জনের বেশি যাত্রী মিলে যে গাড়ি ভাড়া নেন) জন্য রাস্তার যে লেন নির্দিষ্ট, তা বেশি চওড়া হওয়ায় অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। ফলে গতিও বেশি। ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট লেনগুলিতে ভিড় বেশি থাকায় গতি কম। ফলে অনেকেই সেখানে নিজের গাড়ি ছেড়ে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য পুলকার ব্যবহার করা শুরু করেছেন। দিল্লি যে ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে, বেজিং-এও ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সেই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তাই দিল্লির মতো আন্তর্জাতিক মানের শহরে এই ব্যবস্থা চালু করায় বাধা দেওয়া উচিত নয় বলে কেজরীবাল মনে করছেন। পরিবহণ দফতর, ট্র্যাফিক পুলিশ, নগর নিগম-সহ সব সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিয়ে দিল্লি সরকার বৈঠকে বসছে। নতুন ট্র্যাফিক নিয়ম কার্যকরের পদ্ধতি নিয়ে সেই বৈঠকে আলোচনা হবে। দিল্লি সরকার বদরপুর কোল প্ল্যান্টের একটি ইউনিটও আপাতত বন্ধ করতে চলেছে।