পরপর বিস্ফোরণে সে দিন কেঁপে উঠেছিল উৎসবের অপেক্ষায় সেজে ওঠা দিল্লি। দিওয়ালির পসরা সাজিয়ে বসা রাজধানীর আলো ঝলমলে বাজার-বাস স্ট্যান্ড-রেল স্টেশন চত্বর ভরে গিয়েছিল রক্ত আর আতঙ্কে। এক দশক ধরে মামলা চালিয়ে ২০০৫-র সেই ঘটনায় দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণই দিতে পারল না দিল্লি পুলিশ! তৃতীয় অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলেও ইতিমধ্যেই সাজার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় মুক্তি পেয়ে গেলেন আদালতের নির্দেশে। আগেই মুক্তি পেয়েছেন আরও দু’জন। আর বাকি পাঁচ অভিযুক্তের এখনও নাগালই পাননি তদন্তকারীরা।
২০০৫-র ২৯ অক্টোবর, দেওয়ালির এক দিন আগে সরোজিনী নগর, কালকাজি ও পাহাড়গ়ঞ্জে পর পর বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল ৬৭ জনের। আহত হন প্রায় দু’শো জন। আর সেই মামলায় দিল্লির পুলিশের এই ভূমিকায় দেখে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ নিহত ও আহতদের আত্মীয়েরা। ক্ষুব্ধ আদালতও। ওই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরে নভেম্বরেই কাশ্মীর থেকে এক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্মী তারিক আহমেদ দারকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল। গ্রেফতারির সময়ে অফিস থেকে ফিরছিলেন দার। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে প্রথমে আটক করেন দিল্লি পুলিশের গোয়েন্দারা। পরে দারকে গ্রেফতার করে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়। দিল্লি পুলিশ ভুয়ো মামলায় ফাঁসানোর জন্য দারকে ‘অপহরণ’ করেছে বলে দাবি করে তাঁর পরিবার।
আরও পড়ুন:
‘রাজহাঁসটাকে কেটে ফেললে সোনার ডিমটাও যে আর পাবে না আইসিসি’
প্রায় একই সময়ে গ্রেফতার হন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মহম্মদ রফিক শাহ ও শ্রীনগরের শাল বিক্রেতা মহম্মদ হুসেন ফজলি। পরে ফারুক আহমেদ বাটলু ও গুলাম আহমেদ খান নামে আরও দু’জনকে পাকড়াও করে দিল্লি পুলিশ।
আদালতে দিল্লি পুলিশ জানায়, ঘটনার পিছনে রয়েছে লস্কর-ই-তইবার একটি মডিউল। সেই মডিউলের অন্যতম পাণ্ডা দার। এই মডিউলে আবু ওজেফা, আবু আল কামা, রশিদ, সাজিদ আলি ও জাহিদ নামে আরও পাঁচ জন রয়েছে বলেও জানায় পুলিশ। এদের অবশ্য গ্রেফতার করা যায়নি।
মামলা চলাকালীন দোষ স্বীকার করে নেয় ফারুক আহমেদ বাটলু ও গুলাম আহমেদ খান। আদালত জানায়, তাদের যা শাস্তি হতো, তার বেশি সময় ওই দু’জন ইতিমধ্যেই জেলে কাটিয়েছে। ফলে তারা মুক্তি পায়। অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রীতেশ সিংহ আজ জানান, মহম্মদ রফিক শাহ ও মহম্মদ হুসেন ফজলির বিরুদ্ধে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণই দিতে পারেনি পুলিশ। তারিক আহমেদ দারের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রাপ্য মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় ইতিমধ্যেই জেলে কাটিয়েছেন তিনি। ফলে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।