Delhi Assembly Election 2020

‘পাকিস্তানি মহল্লায়’ মোদীর জয়ধ্বনি

পশ্চিম দিল্লির সঞ্জয় কলোনির সাজানো জনপদ যেখানে শেষ, সেখান থেকে শুরু এই খানাখন্দময় ‘পাকিস্তানি মহল্লা’।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১১
Share:

পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের মহল্লা। নিজস্ব চিত্র

রাত গড়িয়ে গেলেও তাসার বাদ্যি বন্ধ হয়নি সে দিন। মহল্লায় ফোকটে লাড্ডু খেতে জুটে গিয়েছিল বেপাড়ার ছেলেপিলেরাও।

Advertisement

‘‘শিঙাড়া বানিয়ে বানিয়ে হাত ব্যথা তো সে-দিন! তার পরে আমাকে রাতে টেনে গিয়ে গেল নাচগানের আসরে,’’ বলছেন গোবিন্দ সিংহ।

পশ্চিম দিল্লির সঞ্জয় কলোনির সাজানো জনপদ যেখানে শেষ, সেখান থেকে শুরু এই খানাখন্দময় ‘পাকিস্তানি মহল্লা’। মোটর চলাচল দূরস্থান, সেখানে ঢুকতে গেলে প্রতি পদে বরাহের ঘোঁতঘোতানি এবং খোলা ড্রেনের পূতিগন্ধময় বাতাসকে উপেক্ষা করতে হবে। তার পরে দেখা পাওয়া যাবে ছোট্ট একটি খাবারের দোকানের। পরম মমতায় ময়দার লেচি দিয়ে ত্রিকোণ খোল বানাচ্ছেন গোবিন্দ। দু’চার কথা বলার পরেই স্পষ্ট বাংলায় যিনি বলতে শুরু করলেন, ‘সেই রাতের’ কথা। যে-রাতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হয়েছিল সংসদে। ‘‘ওঁদের সঙ্গে থাকতে থাকতে ওঁদের সুখ-দুঃখে জুড়ে গিয়েছি। তাই সেই রাতে আমিও শামিল ছিলাম’’, জানাচ্ছেন বনগাঁ থেকে এসে কোনও এক সূত্রে ছটাক জমি পেয়ে শিঙাড়ার দোকান খুলে বসা গোবিন্দ।

Advertisement

জায়গাটির পাকাপাকি নাম হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানি মহল্লা। কারণ, গত পনেরো-বিশ বছর ধরে লাগাতার সীমান্তের ও-পার থেকে হিন্দুরা চলে এসেছেন এ দিকে। এলাকাটি ফাঁকা পড়েছিল দীর্ঘদিন। কার্যত জবরদখল করা হয়েছে। যে যাঁর মতো টালি, অ্যাসবেস্টস, সিমেন্ট দিয়ে মাথা গোঁজার জায়গা করে নিয়েছেন। এখন প্রায় আড়াইশো ঘরের বসতি। দিল্লির ভোটের আগে যেখানে গোটা রাজধানীতে আপ-এর অদৃশ্য হাওয়া বইছে, সেখানে এখানকার স্লোগান ‘মোদী হ্যায় তো জান হ্যায়!’ আইন বলছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তার পরে আর নয়। কিন্তু এই মহল্লার কাছে ইতিমধ্যেই ভরসা পৌঁছে গিয়েছে, এ-সব নিয়ে না-ভেবে ‘দলের কাজে’ হাত লাগাতে। সামনেই দিল্লির ভোট। এর পরে আরও ‘অনেক কাজ’! নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

একটি তুঁত গাছের নীচে শীতের দুপুরে খাটিয়ে পেতে চলছিল তাস-আড্ডা। কাছে গিয়ে পরিচয় দিতেই এক গ্লাস দুধ চলে এল। বোঝা যাচ্ছে, উৎসবের মেজাজটা এখনও যায়নি। ‘‘এই মহল্লায় যাদের দেখছেন, বেশির ভাগই এসেছে পঞ্জাবের শেষ জেলা রহমিয়ার থেকে। বড় নফরত ছিল সেখানে, আর সহ্য করতে পারছিলাম না। কাফের বলে আমাদের ভয়ে ভয়ে থাকতে হত,’’

জানাচ্ছেন অশীতিপর গুলচাঁদ। তবে কথা এগোতে বোঝা গেল, আসল টানটা ছিল পেটের। পাকিস্তানে মাটি কাটার কাজ করতেন। ‘‘খেতে পাচ্ছিলাম না শেষ দিকে। আটার দাম আকাশছোঁয়া।’’ এখানে এসে তাঁর ছেলেরা ইলেকট্রেশিয়ানের কাজ পেয়েছে। আর তাস খেলে, বিড়ি টেনে পরম শান্তিতে দিন কাটছে তাঁর।

অদূরেই উঠোনে বসে ঘোমটা টেনে কুটনো কাটছিলেন ইমিয়া দেবী। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ২০১৫ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে চড়ে ছেলের হাত ধরে চলে এসেছিলেন দিল্লি। ‘‘এখানে আসার পরে শহরের এ-দিক, ও-দিক ঘুরে বেড়ানো যেত না। পরিচয়পত্র ছিল না। এ বার তো আমাদের পরিবারের আরও লোক আসবে। বাচ্চারা ভারতের স্কুলে পড়তে পারবে।’’ আবারও বোঝা গেল, ২০১৪ সালের লক্ষ্মণরেখার খুব একটা তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

মোদী ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের হিন্দুদের অনেকেই তিন মাসের ভিসা করে চলে এসেছেন ভারতে। কেউ রাজস্থানে। অনেকে দিল্লিতে। গড়ে উঠেছে ‘পাকিস্তানি মহল্লা’। যদিও তখনও সিএএ-র নামগন্ধ শোনা যায়নি। বছর দশেক আগে এই মহল্লায় চলে আসা দাদাল রাম বলছেন, ‘‘এখন আরও বেশি ঢল নামবে হিন্দুদের এ দিকে আসার। জলের দরে জমিজায়গা দিয়ে চলে এসেছি। খেয়ে-পরে বাঁচব বলে। এখানে বিজেপির লোকেরা এসে বলেছে, আরও কামধান্দা দেবে। ফলে ভোটের জন্য যা ফাইফরমাশ খাটতে বলছে, খেটে দিচ্ছি।’’

এ বোধ হয় একমাত্র ‘পাকিস্তানি মহল্লা’ যার স্লোগান, ‘মোদী হ্যায় তো জান হ্যায়’!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement