অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী।
মঞ্চ থেকে বলছেন প্রকাশ জাভড়েকর। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী তো বটেই, এখন তিনি বিজেপির পক্ষ থেকে দিল্লি বিধানসভা ভোটের দায়িত্বে রয়েছেন। বিজেপি নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘‘আগামী চার দিন ঘরে-ঘরে যান। সকলকে ফোন করুন। মাটি কামড়ে পড়ে থাকুন।’’
মঞ্চ থেকে জাভড়েকর যখন এ সব বলছেন, দর্শক আসনে বিজেপির একাধিক কর্মী বলাবলি করছেন, ‘‘দিল্লির ৭০ আসনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মেরেকেটেও কুড়ির কোঠা পেরোবে না বিজেপি। কেজরীবাল এখনও অনায়াসে ৫০ টির বেশি আসন পাবেন। আবারও মুখ্যমন্ত্রী হবেন।’’ এক কর্মী বললেন, ‘‘আমি এত বছরের বিজেপি কর্মী, নিজের মা-কেও বোঝাতে পারছি না কেন বিজেপিকে ভোট দেওয়া উচিত। কেজরীবালের কাজ দেখে ‘ঝাড়ু’তেই ভোট দিতে চান মা। এত শাহিন বাগ করেও তেমন দাগ কাটতে পারছে না দল।’’
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই বিজেপি প্রায় আড়াইশো সাংসদকে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী চার দিন কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় ঘরে-ঘরে যেতে হবে। বিশেষ করে গরিব, বস্তি এলাকায়। সেখানেই রাত কাটাতে হবে। লক্ষ্য, শেষ মুহূর্তে অরবিন্দ কেজরীবালের ভোটব্যাঙ্ককে নিজের পক্ষে নিয়ে আসা। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই বিজেপির সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা এই নির্দেশ দিয়েছেন। কোন সাংসদ কোন কেন্দ্রে, ঠিক কোথায় যাবেন, তার তালিকাও তৈরি করে ফেলেছে দল। এলাকার জনতার বৈশিষ্ট্য দেখেই সাংসদ বাছাই হচ্ছে।
দিল্লির জমি শোচনীয় বলেই আদাজল খেয়ে নেমেছেন অমিত শাহ। এখনও দলের নেতৃত্বের আশা, শেষ মুহূর্তের মেহনত বৈতরণি পার করবে। প্রধানমন্ত্রী আজ দ্বিতীয় সভায় ‘শাহিন বাগ’ শব্দ উচ্চারণ করেননি। কিন্তু তিনিও বারবার আবেদন করছেন, ঘরে-ঘরে গিয়ে প্রচার করতে। দিচ্ছেন বুথ আঁকড়ে পড়ে থাকার মন্ত্র। শাহ অবশ্য আজও প্রচারে ‘শাহিন বাগ’ টেনেছেন। কিন্তু কেজরীবালকে নিশানায় রেখে মোদী ইশারায় বলছেন, ‘‘যাঁরা বাটলা হাউসের জঙ্গিদের জন্য কাঁদেন, রাস্তা অবরোধের রাজনীতিকে সমর্থন করেন, সিএএ-র পর দেশ-দুনিয়া দেখছে কী ভাবে লোককে মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’’
মোদীর ইশারা বিজেপির সমর্থকরা বোঝেন বলেই জনতা স্লোগান তুলল ‘জয় শ্রী রাম’। মোদীও বললেন, দিল্লিবাসীর উপর ভরসা আছে। তোষণের রাজনীতির জন্য যাঁরা উস্কানি দিচ্ছেন, তাঁদের দিয়ে কী দিল্লির মঙ্গল হবে? ৮ তারিখে অরাজকতা ও হিংসার থেকে মুক্তি দিতে ভোট দিন। সে দিন ছুটির দিন নয়, রাষ্ট্রবিরোধীদের ছুটি করার দিন।’’
বিজেপি যত মেরুকরণের চেষ্টা করছে, কেজরীবাল ততই বলছেন তাঁর কাজে টক্কর দেওয়ার দম নেই। মোদী আজ তাই পাল্টা শোনালেন, দিল্লি আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প করেনি। জনতা ভিন্ রাজ্যে অসুস্থ হলে কোন ‘মহল্লা ক্লিনিক’ পাবেন? যমুনা রিভারফ্রন্ট গড়ার কথা বলে মোদীর
আশ্বাস, দিল্লির ‘নতুন ফুসফুস’ হবে। আর বলেন, ‘‘আমিও তো দিল্লির রুটি খাই। নুন খেয়েছি। আপনাদের সব কাজ করব।’’